আপনি হয়তো নতুন বছরে ধূমপান বর্জন, ওজন কমানো, ব্যায়াম বা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা না করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। হয়তো এসব প্রতিজ্ঞা গত বছরও করেছিলেন। তাহলে কীভাবে নিশ্চিত করবেন, ২০২৫ সালে আপনার এসব পরিকল্পনা ভালোভাবে টিকে থাকবে।
কেন আমরা পরিকল্পনা করি
কেন লাখ লাখ মানুষ বছরের শুরুতে পরিবর্তনের পরিকল্পনা করে। গবেষণাগুলো দেখিয়েছে, ‘নতুন সূচনা প্রভাব’ নামক একটি বিষয় মানুষকে আকাঙ্ক্ষামূলক আচরণে উৎসাহিত করে। নতুন বছর মানুষকে নতুন পরিকল্পনায় প্ররোচিত করে। যদিও অনেক সময় এ অভ্যাস মানুষকে চাপে ফেলে দেয়। তবে এটি ইচ্ছাশক্তি, সংকল্প ও সৃজনশীলতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সুযোগ দিতে পারে।
পরিকল্পনা ধরে রাখার মূল উপায় নতুন অভ্যাস তৈরি করা। আর নতুন অভ্যাস তৈরিতে প্রয়োজন সময় ও প্রচেষ্টা। নতুন আচরণ রাতারাতি আয়ত্তে আসে না, তবে কিছু সুবিধা অনুভব করা যায়। উদাহরণস্বরূপ নিয়মিত হাঁটার অভ্যাসের পর এটি বাদ দিলে স্বাভাবিক মনে হবে না। এই অভ্যাস চালিয়ে যাওয়ার জন্য তা বড় প্রণোদনা। তাই নিজেকে ধীরে ধীরে সে পথে চালিত করুন, যা আপনি চান। সাতটি ধাপ অনুসরণ করে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন আনুন।
লক্ষ্য স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করুন
অনেকে উদ্দীপনার সঙ্গে ঘোষণা দেন, ‘এই বছর আমি ফিট হব।’ ফিট হওয়া মানে কী? আপনার উদ্দেশ্য কি নির্দিষ্ট পরিমাণ ওজন কমানো, শরীরের চর্বি নির্দিষ্ট মাত্রায় কমানো, তিন মাইল না থেমে দৌড়ানো বা ১০টি পুশআপ দিতে সক্ষম হওয়া? বিশেষজ্ঞদের মতে, লক্ষ্য হতে হবে SMART, অর্থাৎ Specific (নির্দিষ্ট), Measurable (পরিমাপযোগ্য), Achievable (অর্জনযোগ্য), Relevant (প্রাসঙ্গিক), ও Time-bound (সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ)। সুনির্দিষ্টভাবে বোঝা দরকার, আপনি কী অর্জন করতে চান।
অগ্রগতি ট্র্যাক করুন
আপনার অগ্রগতি মাপলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পাবেন। দেখতে পারবেন, কোথা থেকে শুরু করেছিলেন এবং কোথায় পৌঁছেছেন। এটি পথের বাধা বা স্থবিরতা চিনতে সাহায্য করবে; তাই পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে পারেন।
ধৈর্য ধরুন
বাস্তবসম্মত লক্ষ্য স্থাপন করুন এবং বুঝুন যে অগ্রগতি কখনো সরলরৈখিক নয়। তা ছাড়া সবার অগ্রগতি এক রকম হয় না। অনেকের দ্রুত অগ্রগতি হয়, আবার কারও ক্ষেত্রে তা ধীর হতে পারে। স্থায়ী পরিবর্তন আনতে সময়ের প্রয়োজন।
আপনার লক্ষ্য বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করুন
আপনার পরিকল্পনা সবাইকে জানানো লজ্জার মনে হতে পারে; তবে অন্যের সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ। যারা আপনাকে সমর্থন করবে, তাদের প্রতিশ্রুতি পেলে সাফল্যের সম্ভাবনা রয়েছে।
লক্ষ্য সময়সূচিতে রাখুন
মানুষ প্রায় সময় বলে, ‘সময়ের অভাবে কিছু করতে পারি না।’ সময় সবার জন্য একই। আমরা অন্যের চেয়ে বেশি সময় পাই না, বরং কাজ করার জন্য সময় বের করে নিই। আপনার লক্ষ্যগুলোকে অগ্রাধিকার দিন এবং সেগুলো প্রতিদিনের সময়সূচিতে যুক্ত করুন। আপনার লক্ষ্য যদি হয় নিজেকে ফিট রাখা, তাহলে ব্যায়ামের জন্য সময় নির্ধারণ করুন। সময়কে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ মনে করুন।
‘সব অথবা কিছুই নয়’ ভাবনা পরিত্যাগ করুন
অনেক সময় ভাবি, ‘যেহেতু আজ ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেলাম, তাহলে কোল্ড ড্রিংকসও খাওয়া যাক।’ এ ধরনের চিন্তা লক্ষ্য থেকে সরিয়ে দেয়।
হাতে ১ ঘণ্টা সময় না থাকলে জিমে ২০ মিনিটের মধ্যে সর্বোচ্চ কাজটি করুন। কোনো প্রচেষ্টা না করার চেয়ে অল্প কিছু করা ভালো।
ভুল করলে আবার উঠে দাঁড়ান
আমরা কেউ নিখুঁত নই। ভিন্স লোম্বার্ডির বিখ্যাত উক্তি, ‘আপনি পড়ে যাবেন কি না, সেটা বিষয় নয়; বিষয় হলো আবার উঠে দাঁড়াবেন কি না।’ সাময়িক ব্যর্থতাকে পুরোপুরি হার মনে করবেন না; বরং ভুল স্বীকার করে আবার নতুন উদ্যমে এগিয়ে যান। পরিবর্তন কঠিন মনে হতে পারে, তবে হাল ছাড়লে চলবে না। ছোট ছোট পরিবর্তন দীর্ঘ মেয়াদে বড় সুফল আনতে পারে। তাই এগিয়ে যান এবং নতুন বছরের প্রতিজ্ঞা সফল করুন।