কেউ ধূমপান ছেড়ে দিতে চাইলে তিনি তাঁর স্মার্টওয়াচের সাহায্য নিতে পারেন। ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপান ত্যাগের ক্ষেত্রে একটি স্মার্টওয়াচ অ্যাপ কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
বুধবার গার্ডিয়ান জানিয়েছে, গবেষকেরা এমন একটি অভিনব মোশন সেন্সর সফটওয়্যার তৈরি করেছেন, যা ধূমপানের সময় হাতের নির্দিষ্ট নড়াচড়াগুলো শনাক্ত করতে পারে।
এর ফলে কেউ যদি ধূমপান করেন তবে তাঁর স্মার্টওয়াচের স্ক্রিনে একটি সতর্কতা ভেসে ওঠে। একই সঙ্গে একটি অ্যাপ ভাইব্রেশনসহ একটি সহায়ক বার্তা প্রদর্শন করে। এই ধরনের বার্তাগুলো ধূমপান ত্যাগ করার জন্য উৎসাহিত করে।
উদাহরণস্বরূপ, বার্তাগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে এমন—‘ধূমপান ত্যাগ করলে শ্বাস নেওয়া সহজ হয়, তাই ত্যাগ করাই ভালো।’
অন্য বার্তাগুলোতে প্রতিদিন কতটি সিগারেট খাওয়া হয়েছে এবং কতবার ধূমপানের চেষ্টা করা হয়েছে তারও একটি হিসাব দেওয়া হয়।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা জানিয়েছেন, তাঁদের তৈরি ওই অ্যাপটি এমন একটি তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ প্রক্রিয়া, যা স্মার্টওয়াচের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে চালিত হয় এবং স্মার্টফোনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রয়োজন হয় না।
গবেষক ক্রিস স্টোন বলেছেন, ‘ধূমপান ত্যাগের প্রচেষ্টার সময় কেউ এটির প্রাথমিক পুনরাবৃত্তি করলে তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এভাবে ওই ব্যক্তি আবারও সম্পূর্ণরূপে ধূমপানে ফিরে যেতে পারেন। তাই পুনরাবৃত্তির মুহূর্তটি চিহ্নিত করে সঠিক সময়ে হস্তক্ষেপ করা গেলে ত্যাগ প্রচেষ্টার সফলতার হার বাড়ানো সম্ভব।’
এই সংক্রান্ত গবেষণাটি সম্প্রতি জেএমআইআর ফরমেটিভ রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। স্মার্টওয়াচ অ্যাপটি পরীক্ষামূলকভাবে ১৮ থেকে ৭০ বছর বয়সী ১৮ জন অংশগ্রহণকারীকে দেওয়া হয়েছিল। এই ব্যক্তিরা দিনে ১০ টির বেশি সিগারেট খান।
পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা দুই সপ্তাহ ধরে একটি স্মার্টওয়াচ পরিধান করেন। ওই স্মার্টফোনেই লোড করা ছিল পরীক্ষামূলক অ্যাপটি। নির্দিষ্ট সময় পর ৬৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, অ্যাপটি ব্যবহার করা সহজ এবং গ্রহণযোগ্য। ৬১ শতাংশ বলেছেন, বার্তাগুলোর বিষয়বস্তু তাদের জন্য প্রাসঙ্গিক।
অংশগ্রহণকারীরা জানান, অ্যাপটি ধূমপান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, ধূমপান ত্যাগে ইতিবাচক অনুভূতি তৈরি, ধূমপান কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সহায়তা এবং ধূমপান নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ তৈরি করতে পারে।
তবে বারবার বার্তা আসায় এটির কার্যকারিতা কমে যাওয়া, কিছু বার্তা দ্রুত প্রদর্শিত না হওয়া, বার্তার বৈচিত্র্য কম থাকা, কিছু বার্তা খুব সাধারণ এবং অস্পষ্ট বলেও মন্তব্য করেছেন অংশগ্রহণকারীরা।
এ অবস্থায় গবেষকেরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদি ট্রায়ালে বার্তার বৈচিত্র্য বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ক্যানসার রিসার্চ ইউকে-এর অ্যালিজে ফ্রগুয়েল বলেছেন, ‘এই গবেষণা প্রমাণ করেছে, ধূমপান ত্যাগে স্মার্টওয়াচ একটি কার্যকর মাধ্যম হতে পারে। তবে এর কার্যকারিতা আরও ভালোভাবে বুঝতে বেশি গবেষণার প্রয়োজন।’