ইউরোপে উন্নত জীবনের আশায় সোমালিয়া থেকে যাত্রা করেছিলেন গোলেই। স্থানীয় পাচারকারীদের তিনি সাড়ে ৬ হাজার ডলার দিয়েছিলেন। তবে এক মাস পর সেই যাত্রার সমাপ্তি ঘটেছিল সাগরে। আর তাঁর সঙ্গীদের অনেকেই প্রাণ হারিয়েছিলেন।
গত মাসের সেই ঘটনায় ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপ মাদাগাস্কারের কাছে অন্তত ২৫ অভিবাসীর মৃত্যু ঘটেছিল। তবে গোলেই ছিলেন এই ঘটনায় বেঁচে ফেরা ৪৮ জনের একজন।
সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) নিজের দুর্ভাগ্যের কাহিনি জানিয়েছেন গোলেই। সোমালিয়ায় উগ্রপন্থীদের হামলা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা গোলেইর মতো আরও অনেকের জীবিকা এবং আশা ধ্বংস করে দিচ্ছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে সোমালিয়া থেকে অনেকেই রেড সি ও ইয়েমেনের মাধ্যমে গালফ অঞ্চলে যান। অন্যরা গোলেইর মতো দক্ষিণ দিকে আরও দীর্ঘ সমুদ্রপথে ফরাসি দ্বীপ মায়োত্তের দিকে রওনা হন। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চল।
ফরাসি কর্তৃপক্ষের মতে, মায়োত্তেতে আনুমানিক ১ লাখ অভিবাসী বাস করেন। তাদের মধ্যে অনেকেই কয়েক দিন আগে সাইক্লোন চিডোর প্রলয়ংকরী আঘাতে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, ২৮ বছর বয়সী গোলেই তাঁর ছোট্ট চায়ের দোকানের আয় এবং ভাই ও মায়ের সহায়তায় পাচারকারীদের খরচ জোগাড় করেছিলেন। তিনি ইউরোপে পৌঁছে তাঁদের ঋণ শোধ করার স্বপ্ন দেখছিলেন। যাত্রার সময় বাড়িতে তিনি তাঁর তিনটি ছোট ছোট সন্তানকেও রেখে গিয়েছিলেন।
গোলেইর যাত্রা শুরু হয় সোমালিয়ার মোগাদিশু থেকে। প্রথমেই তিনি একটি ফ্লাইটে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবি পর্যন্ত যান। পরে আরও কয়েকজনের সঙ্গে তিনি একটি বাসে করে মোমবাসা বন্দর শহরে যান। সেখান থেকে তাঁরা মায়োত্তের উদ্দেশ্যে এক মাছ ধরার নৌকায় যাত্রা করেন।
তিন দিন সমুদ্রে কাটানোর পর তাঁদেরকে ছোট ছোট নৌকায় তোলা হয়েছিল। কিন্তু ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দিলে পাচারকারীরা ইঞ্জিন ঠিক করার কথা বলে অন্য নৌকায় চলে যান।
এ অবস্থায় গোলেই সহ ফেলে যাওয়া দলটি খাদ্য ও পানি ছাড়া সমুদ্রে ভাসতে থাকে। বাঁচার জন্য তারা মাছ ধরতে এবং বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করতে বাধ্য হন।
নৌকায় এক নবজাতককে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন গোলেই। কিন্তু সেই শিশু তাঁর সামনেই মারা যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁর মৃতদেহ বেশিক্ষণ রাখতে পারিনি। পচন এড়াতে তাকে সাগরে ফেলে দিতে হয়েছিল।’
ক্ষুধা, তৃষ্ণা এবং উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ১৩ দিনের মাথায় গোলেইর দুই বন্ধুও মারা যান। এক বন্ধু তাঁর কোলে মাথা রেখেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
শেষ পর্যন্ত একটি মাছ ধরার নৌকা তাঁদের উদ্ধার করে মাদাগাস্কারের উত্তরাঞ্চলে একটি স্থানে নিয়ে যায়। পরে একটি চার্টার্ড বিমানে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
দুঃসহ স্মৃতি নিয়েও গোলেই বলেন, ‘আমি আবারও চেষ্টা করব। এখানকার জীবনের চেয়ে কারাগারেও ভালো জীবন পাব বলে বিশ্বাস করি।’
অন্যদিকে গোলেইর মা এখন আতঙ্কিত এই ভেবে যে, এবার আর তাঁর মেয়ে ফিরে আসবে না।
গোলেইর এই সাহসিকতার কাহিনি সোমালির কঠিন বাস্তবতার এক করুণ চিত্র তুলে ধরে। যেখানে জীবনের আশা বাঁচিয়ে রাখতে মানুষ চরম ঝুঁকি নিতে বাধ্য হয়।