বিশ্বজুড়ে রক্তাক্ত গণতন্ত্র, তবু মাথা নোয়াবার নয়

রয়টার্স

প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১: ১২
নির্বাচনে প্রচারণার সময় দুইবার হত্যাচেষ্টার শিকার হন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

২০২৪ সাল ছিল ঘটনাবহুল বছর। এ বছর বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী ভোট দিয়েছে। সহিংসতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা গণতন্ত্রের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু গণতন্ত্রের বিনাশ হয়নি। বিশ্বজুড়েই রক্তাক্ত গণতন্ত্র, তবু মাথা নোয়াবার নয়!

বিশ্বের অন্যতম পুরোনো গণতন্ত্রের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারণার সময় দুবার হত্যাচেষ্টার শিকার হন সাবেক প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ও অস্থিরতার আশঙ্কা কাটিয়ে নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে হোয়াইট হাউসে ফিরছেন তিনি।

মেক্সিকোর ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী নির্বাচন হয় ২০২৪ সালে। এ বছর দেশজুড়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ৩৭ জন প্রার্থী গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। সহিংস নির্বাচনের মধ্যেই ক্লডিয়া শেইনবাউম মেক্সিকোর প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বড় বড় পরিবর্তন এসেছে। এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকায় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে। এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতে দীর্ঘদিনের শাসক দলগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেও ক্ষমতায় টিকে গেছে।

এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ দক্ষিণ কোরিয়া এই মাসে বড় রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়। প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইয়োল সামরিক আইন জারি করার ঘোষণা দেন। কিন্তু তীব্র প্রতিবাদ ও গণবিক্ষোভের মুখে তা দ্রুত প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। সংসদে তাঁকে অভিশংসন করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্ববাজারে প্রভাব পড়ে এবং মিত্র দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়।

ইউরোপের দেশ জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া ও রোমানিয়ায় ডানপন্থী দলের শক্তি বেড়েছে। রুশপন্থী দলগুলো জর্জিয়া ও মলদোভাতে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ফল করেছে। তবে ব্রিটেনে বামপন্থী লেবার পার্টি ১৪ বছরের কনজারভেটিভ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসে।

সামগ্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের কোথাও কোনো বাধা দেওয়ার প্রচেষ্টা দেখা যায়নি জানিয়েছেন মার্কিন সংস্থা ফ্রিডম হাউসের গবেষণা পরিচালক ইয়ানা গোরোখোভস্কিয়া। তাঁর সংস্থা প্রতিবছর বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন দেয়।

তবে ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে স্বৈরতন্ত্র আরও বেশি নিপীড়ক হয়েছে বলে মনে করেন গোরোখোভস্কিয়া। রাশিয়া, ইরান ও ভেনেজুয়েলায় ‘লজ্জাজনক’ নির্বাচন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ফ্রিডম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ৬২টি নির্বাচনের এক-চতুর্থাংশে ভোটারের সামনে ‘প্রকৃত’ বিকল্প ছিল না। গোরোখোভস্কিয়া বলেন, ‘বিষয়টি এমন নয় যে গণতন্ত্র আবেদন হারিয়েছে, তবে স্বৈরতন্ত্রগুলো আরও খারাপ হয়েছে।’

বৈশ্বিক গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে একটি নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। নজিরবিহীন প্রাণহানির মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নজিরবিহীনভাবে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। ২০২৫ সালের শেষে বাংলাদেশে নির্বাচন হতে পারে।

এদিকে সিরিয়ায়ও প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। দীর্ঘ ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধ শেষে বিদ্রোহীরা দামেস্ক দখল করেছে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রাশিয়ায় পালিয়ে গেছেন। দেশটি এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের নিয়ন্ত্রণে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশে নির্বাচনের কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি।

২০২৪ সালে গণতন্ত্র বিভিন্ন সংকটে পড়লেও স্থিতিশীলতা ছিল। তবে ২০২৫ সাল গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বছর হতে পারে। এবছর জার্মানির সংসদ নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সেই সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রে গণমাধ্যম ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কেমন থাকে, সেটাও দেখার বিষয়।

একের পর এক ফ্লাইট বিলম্ব, জেটব্লুকে ২০ লাখ ডলার জরিমানা

বিজিবি–বিএসএফের মানবিক উদ্যোগ: ভাইকে শেষবারের মতো দেখলেন বোন

ছেলের রক্তে বয়স কমাবেন ‘হিউম্যান বার্বি’ মার্সেলা

লাদাখে নতুন দুই প্রশাসনিক অঞ্চল ঘোষণা চীনের, ভারতের প্রতিবাদ