হোম > বিশ্ব > যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা

এক্সিওসের প্রতিবেদন

ইরানে হামলার প্রস্তুতি আলোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬: ১১
জো বাইডেনের সঙ্গে আলাপরত জেক সুলিভান। ছবি: এএফপি

ইরানের হামলার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে একটি পরিকল্পনা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান। কয়েক সপ্তাহ আগে, বাইডেন, জেক সুলিভান ও অন্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত তিনটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওসকে এই বিষয়টি জানিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের হাতে সময় আছে মাত্র দুই সপ্তাহের মতো। এই সময়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে মার্কিন হামলা চালানো তাঁর জন্য বড় একটি ঝুঁকি হতে পারে। বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেবেন না। তবে এটি করতে গিয়ে যদি ইরানে হামলা চালানো হয়, তাহলে এটি নতুন প্রেসিডেন্টের হাতে একটি সংঘাতের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার ঝুঁকিও বাড়াবে। সূত্র অনুযায়ী, বাইডেন ওই বৈঠকে কোনো হামলার অনুমোদন দেননি এবং এখনো দেননি।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা দল বৈঠকে বিভিন্ন বিকল্প ও পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকটি প্রায় এক মাস আগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে সূত্রগুলো বলছে, প্রেসিডেন্ট এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি।

এ বিষয়ে জ্ঞাত এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বৈঠকটি নতুন কোনো গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে করা করা হয়নি। কিংবা বাইডেনের কাছ থেকে হামলা বিষয়ে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ সিদ্ধান্ত আসবে—এই আশা করেও করা হয়নি। বরং এটি ছিল একটি ‘সতর্ক পরিকল্পনা’। যদি ইরান ২০ জানুয়ারির আগে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার মতো পদক্ষেপ নেয়, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সাড়া দেবে তা নিয়ে আলোচনা করাই ছিল এই বৈঠকের উদ্দেশ্য।

আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে বর্তমানে কোনো সক্রিয় আলোচনা চলছে না। বাইডেনের কয়েকজন শীর্ষ সহকারী যুক্তি দিয়েছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির গতি বৃদ্ধি এবং ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে ইরান ও তার প্রক্সিদের দুর্বলতা—এই দুটি বিষয় বাইডেনকে হামলার জন্য প্রয়োজনীয়তা ও সুযোগ দিয়েছে।

সূত্রগুলো বলেছে, বাইডেনের কয়েকজন সহকারী, বিশেষ করে সুলিভান মনে করেন যে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা দুর্বল হওয়া এবং তাদের আঞ্চলিক মিত্রদের দুর্বলতা একটি সফল হামলার সম্ভাবনা বাড়াবে এবং ইরানের প্রতিশোধ ও আঞ্চলিক উত্তেজনার ঝুঁকি কমাবে।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুলিভান এই বিষয়ে বাইডেনকে কোনো সুপারিশ করেননি। তিনি শুধু পরিস্থিতিগত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। হোয়াইট হাউস এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। একটি সূত্র জানিয়েছে, বাইডেন মূলত এই বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছেন, পরিস্থিতি কতটা জরুরি এবং ইরান এমন কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি না।

ইরান দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না এবং তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধু বেসামরিক উদ্দেশ্যে। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, ইরানের কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা প্রকাশ্যে ইরানের পারমাণবিক নীতিতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন।

সপ্তাহ দু-এক আগে, জেক সুলিভান বলেন, ‘আপনি ইরানি কর্মকর্তাদের প্রকাশ্য বিবৃতি দেখলে বুঝতে পারবেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাদের বক্তব্য পরিবর্তন হয়েছে। তারা এই কৌশলগত আঘাতগুলোর মুখোমুখি হয়ে প্রশ্ন তুলছে—কোনো একসময় কি আমাদের নীতি পরিবর্তন করতে হবে? প্রকাশ্যে এমন কথা বলা অবশ্যই খুব সতর্কতার সঙ্গে দেখা উচিত।’

সুলিভান সেদিন আরও বলেছিলেন, ‘ইরান এবং তার সহযোগীরা গত বছর যে আঘাতগুলো পেয়েছে, তা তেহরানকে পরমাণু অস্ত্র অর্জনের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এটি শত্রুর জন্য এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে যা অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।’

বাইডেনের ক্ষমতায় আসার পর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নাটকীয়ভাবে এগিয়ে গেছে। ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে ফেলেছে। এই অবস্থা থেকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইরানের উন্নত সেন্ট্রিফিউজগুলো কয়েক দিনের মধ্যে এটি সম্পন্ন করতে সক্ষম।

আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) অনুযায়ী, ইরানের কাছে যে পরিমাণ ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আছে তা দিয়ে চারটি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব। যদি ইরান বোমা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে দেশটিকে একটি পারমাণবিক বিস্ফোরক ডিভাইস বা ওয়ারহেড তৈরি করতে হবে। ইসরায়েলের গোয়েন্দাদের বিশ্বাস, এ জন্য অন্তত এক বছর সময় লাগবে।

অক্টোবর মাসের শেষ দিকে ইসরায়েলের ইরানের পারচিন সামরিক কমপ্লেক্সে হামলা চালিয়েছে পারমাণবিক কর্মসূচি সংশ্লিষ্ট আধুনিক সরঞ্জাম ধ্বংস করার দাবি করে। তাদের দাবি, এগুলো একটি পারমাণবিক বিস্ফোরক ডিভাইস ডিজাইন এবং পরীক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল।

তবে মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছেন, গত বছরে ইরানের বিজ্ঞানীরা পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ-সম্পর্কিত সন্দেহজনক গবেষণা করেছেন। বিশেষ করে তাঁরা কম্পিউটার মডেলিং এবং মেটাল সায়েন্স নিয়ে তারা কাজ করেছে। এই বিষয়গুলো মূলত পারমাণবিক বোমা তৈরির সময় কমানোর লক্ষ্যেই নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাইডেন প্রশাসন গত বসন্তে ইরানকে একটি গোপন সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিল, যাতে দেশটি ইরানের পারমাণবিক গবেষণা এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। মার্কিন ও ইসরায়েলি উভয় সরকারই গত কয়েক মাসে ইরানের বিজ্ঞানীদের সন্দেহজনক পারমাণবিক কার্যক্রম শনাক্ত করেছে।

আবারও কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য হওয়ার প্রস্তাব ট্রাম্পের

ট্রুডোর পতন ও বিশ্বের অন্যখানেও রাজনৈতিক পরিবর্তনের মূলে কারণ একই

জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের ঘোষণা, খোঁজা হচ্ছে উত্তরসূরি

শীতকালীন ঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র, দেড় হাজার ফ্লাইট বাতিল