পাহাড়, ঝরনা, বন আর স্থানীয় মানুষের বর্ণিল কিন্তু শান্ত জীবনযাপন চিরকালই আকর্ষণ করে এসেছে পর্যটকদের। এ রূপের সঙ্গে রাঙামাটিতে এখন যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন রিসোর্ট। প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সমন্বয় করে তৈরি এসব রিসোর্ট এখন নজর কাড়ছে সবার। পর্যটকদের জন্য প্রায় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় এসব জায়গায়। এসব রিসোর্ট রাঙামাটির পর্যটনকে সমৃদ্ধ করছে।
রাঙামাটি থেকে আসামবস্তি হয়ে কাপ্তাই পর্যন্ত এলজিইডির মনোরম সড়কটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একাধিক রিসোর্ট। কোলাহলমুক্ত পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার অন্যতম জায়গা হিসেবে পরিচিত এ সড়ক। এখানকার বিভিন্ন পয়েন্টে যেসব রিসোর্ট গড়ে উঠেছে, সেগুলোর মধ্যে আছে—
বার্গি লেক ভ্যালি
রাঙামাটি জেলার অভিজাত রিসোর্টের মধ্যে এটি অন্যতম। এখানে থাকা-খাওয়া, বিনোদন, কনফারেন্স, সুইমিং, কায়াকিং, ফিশিং, ক্যাম্প ফায়ার, তাঁবুতে রাত যাপন, বারবিকিউ পার্টি এবং হাউস বোটে কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে কটেজ ভাড়া ৪ হাজার টাকা থেকে শুরু। পাহাড়ের স্থানীয় স্থাপত্য নকশায় তৈরি এ কটেজগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এগুলোর প্রতিটি থেকে কাপ্তাই লেক দেখা যায়।
বার্গি লেক ভ্যালিতে কটেজ, জেনারেল ও হাউস বোটে ১০০ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে। রাঙামাটি শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার।
বরগাঙ
কর্ণফুলী নদীকে চাকমা ভাষায় বলা হয় বরগাঙ। কর্ণফুলী নদীর পাড়ে বরগাঙ রিসোর্ট। এখানে পর্যটকদের জন্য মনোরম পরিবেশে রাখা হয়েছে রাত যাপনের ব্যবস্থা। এখানকার কটেজ ভাড়া
২ হাজার টাকা থেকে শুরু। একেকটি কটেজে ১০-১৫ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে। রাঙামাটি শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার।
বেড়ান্নে লেক শোর ক্যাফে
বেড়ান্নে লেক শোর ক্যাফে একসময় শুধু খাবার বিক্রি করলেও পর্যটকদের চাহিদার কথা ভেবে কটেজ সার্ভিস চালু করেছে। পাহাড়ের প্রকৃতির সঙ্গে মিল রেখে এখানে রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে। কটেজ ভাড়া ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু। রাঙামাটি শহর থেকে এর দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। এর পাশে আরও দুটি রিসোর্ট রয়েছে। এর একটি ইজর, অন্যটি রেং।
রাইন্যা টুগুন ইকো রিসোর্ট
কাপ্তাই হ্রদের মাঝে একটি দ্বীপ ঘিরে তৈরি করা হয়েছে রাইন্যা টুগুন ইকো রিসোর্ট। ২৮ একর জমির ওপর গড়ে তোলা এ রিসোর্ট রাঙামাটির পর্যটনকে করেছে সমৃদ্ধ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ললিত সি চাকমা এর উদ্যোক্তা। ন্যাড়া পাহাড়ে দেশীয় নানা জাতের গাছ লাগিয়ে মনোরম বাগান তৈরি করেছেন তিনি। এখানে সারা দিন বিভিন্ন পাখির ডাক শোনা যায়। বনমোরগের অবাধ বিচরণক্ষেত্র এ রাইন্যা টুগুন।
এখানে রাতে ৫০ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে। থাকা-খাওয়া, বিনোদন, কনফারেন্স, সুইমিং, কায়াকিং, ফিশিং, ক্যাম্প ফায়ার, তাঁবুতে রাত যাপন, বারবিকিউ—সবকিছুরই ব্যবস্থা রয়েছে রাইন্যা টুগুনে। কটেজ ভাড়া ৪ হাজার টাকা থেকে শুরু। রাঙামাটি শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। আর কাপ্তাই উপজেলা শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৪ কিলোমিটার।
জুম কিং ইকো রিসোর্ট
পাহাড়ের চাষাবাদ পদ্ধতির এক নাম হচ্ছে জুম। জুমে মগ্ন তনয় দেওয়ান আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কের কামিলাছড়ি এলাকায় গড়ে তুলেছেন জুম কিং ইকো রিসোর্ট। কাপ্তাই হ্রদের একাধিক দ্বীপে গড়ে তোলা হয়েছে এগুলো। কটেজের ভাড়া ৪ হাজার টাকা থেকে শুরু।
গ্রুপ ট্যুরের উপযুক্ত স্পট এ রিসোর্ট। রাতে তাঁবুতে থাকা, ক্যাম্প ফায়ার এবং বারবিকিউ পার্টির সুবিধা আছে এ রিসোর্টে।
গাংপাড়
জুমকিং ও রাইন্যা টুগুনের পাশে আরেকটি মনোরম রিসোর্ট গাংপাড়। চাকমা শব্দ গাংপাড় অর্থ নদীর পাড় বা তীর। কাপ্তাই হ্রদের পাড়ে এ রিসোর্ট গড়ে তুলেছেন স্থানীয় মৌজার হেডম্যান হিটলার দেওয়ান।
থাকা-খাওয়া, বিনোদন, কনফারেন্স, সুইমিং, কায়াকিং, ফিশিং, ক্যাম্প ফায়ার, তাঁবু বাস, বারবিকিউ—সবকিছুর ব্যবস্থা রয়েছে গাংপাড়ে। কটেজ ভাড়া ৪ হাজার টাকা থেকে শুরু। তাঁবুতে দিতে হবে ১ হাজার ৫০০ টাকা। তাঁবুসহ থাকার সব ব্যবস্থা করবে গাংপাড় কর্তৃপক্ষ।
এসব বড় রিসোর্টের পাশাপাশি রাঙামাটির বিভিন্ন জায়গার রিসোর্টগুলোর মধ্যে রাঙা দ্বীপ, নীলাঞ্জনা, রাঙা বেসক্যাম্প, পেদা টিং টিং অন্যতম।