হোম > মতামত > উপসম্পাদকীয়

লোকাল বাসের অভিজ্ঞতা

নাফিসা চৌধুরী, আবৃত্তিকর্মী

আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২১, ০৮: ৪০

লোকাল বাসে হরহামেশাই সবচেয়ে বেশি সমস্যা নারীদের হয়। নিয়মিত যেসব নারী অনেক ভোগান্তি সহ্য করে যাতায়াত করেন, তাঁদের কাছে তাঁদের তিক্ত অভিজ্ঞতা শুনতে চাইলে তাঁরাও হয়তো অনেক বাজে অভিজ্ঞতা আর হয়রানির কথা বলবেন।

‘প্রতিবন্ধী ও নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৬টি আসন’—এ কথা নিয়ে কতজন কত যে ঠাট্টা করে, তা শুনে শুনে কান পচে গেছে অনেকের। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া ছেলেরাও যখন এ ধরনের কথা বলেন, তখন বিস্মিত হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

কেউ কেউ বলেন, ‘প্রতিবন্ধী আর নারীদের সিট! এরা তো একই ধরনের, তাই নারীদেরও আলাদা সিট, হাহাহাহা!’

কেউবা বলেন, ‘এত্ত সম-অধিকার সম-অধিকার কইরা চিল্লায়, তাইলে বাসে আলাদা সিট লাগে ক্যান? খাড়াইয়া যাইতে পারে না আমগো মতো?’

অথবা নারী সিটে বসে কোনো তরুণ বা পূর্ণবয়স্ক পুরুষ নিজের বানানো যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘৬টা সিট নারীদের, বাকি সিট পুরুষদের, আমরা তো আমাদের (সংরক্ষিত আসন বাদে অন্য আসন) সিটে বসতে দিচ্ছি, তাহলে আমি নারীর সিটে বসলে কী সমস্যা!’

দেখা যায়, কোনো বয়স্ক নারী বা বৃদ্ধ লোক দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁদের দেখে অনেক সময়ই ছেলে বা নারীরা সিট ছেড়ে বসতে দেন। অপরদিকে অন্য কোনো পুরুষ নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে গাঁট হয়ে বসে থাকেন, সবাই উঠতে অনুরোধ করলেও দিব্যি তা না শুনে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বসে থাকেন।

অনেক সময় দেখা যায় খালি বাস, দু-একজন উঠেছে। কোনো আসনে কোনো নারীকে দেখে তাঁর পাশের আসনেই কিছু লোক এসে বসে পড়ে। বললেও সরতে চায় না, বাকি ফাঁকা সিটে যেতে বললেও যায় না।

বেশি ভিড় যে সময়গুলোয়, তখন বাসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার সময় ধাক্কা লাগলে (অনেক সময় ইচ্ছে করে ধাক্কা দেয় যা বোঝা যায়) একজন নারী যদি বলে বসেন, ‘সরে দাঁড়ান, গায়ের ওপর পড়ে যাচ্ছেন তো।’

জবাবে শুনতে হয়, ‘এটা লোকাল বাস, ধাক্কা লাগতেই পারে বাস ব্রেক করলে, এত সমস্যা হলে নিজে গাড়ি কিনে চলাফেরা করেন।’

এ ছাড়া গায়ে হাত দেওয়া, খোঁচা দেওয়া, বাজেভাবে তাকানো, সারা পথ তাকিয়ে থেকে অপ্রস্তুত অনুভব করানো—এসব যেন নিত্যদিনের চিত্র। আরও কষ্টদায়ক ব্যাপার হলো, নারীরা প্রতিবাদ করলে বাসে উপস্থিত অন্য পুরুষেরা পারতপক্ষে কোনো কথা বলেন না, যেন কিছুই হয়নি বা কেউ কিছুই শুনতে পাচ্ছেন না।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেই বরং লজ্জা পেতে হয়, মাথা নত করে থাকতে হয়। চারপাশের মানুষগুলো এমনই অনুভব করায়।

নিয়মিত একই সময় একই রাস্তায় যাতায়াতের ফলে অনেক সময় কিছু বিকারগ্রস্ত মানসিকতার পুরুষ নির্দিষ্ট কিছু নারীকে ফলো করেন এবং তাঁর বাসের পেছনের সিটে বসে সিটের
পাশ দিয়ে গায়ে হাত ছোঁয়ানোর চেষ্টা করেন।

এসব পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং কোনো নারী প্রতিবাদ করলে তাঁকে সহায়তা করতে হবে। এতে করে বিকারগ্রস্ত বা অসুস্থ মানসিকতার মানুষগুলো এত সাহস দেখাতে বা অন্যায় করতে পারবেন না। আর করলেও পরবর্তীকালে ফলাফলের কথা একবার হলেও ভাববেন। নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক, তাই একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে বাংলাদেশের রাস্তায় নারীরা নিশ্চিন্তে যাতায়াত করতে পারবেন।

‘জনপ্রশাসন’ শব্দটাই একটা বিতর্কিত শব্দ

ফিরিয়ে দিন শহীদ আনোয়ারা উদ্যান

‘দারিদ্র্য নিরসন’ কথাটায় তিনি বিশ্বাস করতেন না

উচ্চমূল্যেও গ্যাস পাওয়ার নিশ্চয়তা আছে কি