বর্তমানে বাংলাদেশ একটি অনুকূল জনসংখ্যাতাত্ত্বিক পরিবর্তনের সম্মুখীন। এখানে ৬৫ শতাংশের বেশি মানুষের বয়সের সীমা ১৫-৬৪ বছর। যুবশক্তির এই জোয়ারের মধ্যে একটি প্রশ্ন উঠে আসে, আমাদের সরকারে কতজন তরুণ?
আমাদের দেশের রাজনীতিতে জনপ্রতিনিধিত্ব করা বেশির ভাগের বয়সই ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে। অথচ এই বয়সটা অবসর গ্রহণের বয়স। অনেকেই সরকারি চাকরি অথবা ব্যবসা থেকে অবসর নিয়ে বৃদ্ধ বয়সে রাজনীতিতে আসছেন শুধু ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রয়াসে। তাঁরা কিন্তু তরুণদের সম্মুখভাগে এগিয়ে দিয়ে পরামর্শদাতা হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে থাকতেই পারেন। কিন্তু তাঁরা পক্ষাঘাতগ্রস্ত অথবা মৃত্যুর আগপর্যন্ত ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চান। রাজনীতিতেও অবসর গ্রহণের সংস্কৃতি দরকার, সেটা তাঁরা ভুলেই যান।
আমাদের দেশের ১৮ বছর বয়স থেকে একজন তরুণ ভোটাধিকার পেয়ে থাকেন। তরুণ বয়সে যদি তাঁরা দেশের দায়িত্ব কাকে দেওয়া উচিত সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতে পারেন, তবে কেন তাঁরা দেশের দায়িত্ব নিতে পারবেন না? তাঁদের নতুন চিন্তাধারা, উদ্ভাবনী শক্তি ও উদ্যম রাজনীতিতে প্রয়োগ করলে দেশ অনেকাংশে এগিয়ে যাবে। যেহেতু আমাদের দেশের জনসংখ্যার বেশির ভাগ তরুণ, তাই তাঁদের চাওয়া-পাওয়া প্রবীণ অপেক্ষা তাঁরাই বেশি অনুধাবন করতে পারবেন। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা অবশ্যই রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ, তবে তাঁদের পরামর্শক হিসেবে রাখাই যুক্তিযুক্ত। আমাদের দেশে এযাবৎকাল যতজন তরুণ সংসদ সদস্য হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই হয়েছেন বংশানুক্রমে। কিন্তু তরুণদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ও জনপ্রতিনিধিত্বমূলক কাজে অংশগ্রহণে স্বজনপ্রীতি বেশি দেখা যায়। এভাবে উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতিতে আসাটা কোনোভাবেই বাঞ্ছনীয় নয়। উপমহাদেশে পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতি দেখে জনগণ অভ্যস্ত। এমপির ছেলে-মেয়ে এমপি হবে, এটা জনগণ সাদরে গ্রহণ করে নেয়। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত, ফৌজদারি মামলা থাকলেও আমরা ওই পরিবারের কাউকে না কাউকে গ্রহণ করি। কারণ, এটাই আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ এখন রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণের মুখে দাঁড়িয়ে। সমাজ-রাজনীতির নেতৃত্বে তরুণেরা চালিকাশক্তি হিসেবে না এলে এ দেশের স্বজনতোষী ও গোষ্ঠীস্বার্থনির্ভর রাজনীতির পরিবর্তন সম্ভব নয়।
রাজনীতিতে গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে আসার একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য দেশের প্রতিটি সেক্টরে পরিবর্তন করতে তরুণদের ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। তরুণেরা স্বভাবতই নতুন নতুন বিষয়ের সঙ্গে দ্রুত খাপ খাওয়াতে পারে। জনসম্পৃক্ত তরুণেরাই দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারবে বলে মনে করি। এটা অবশ্যই রাতারাতি সম্ভব নয়, তদুপরি পরিবর্তনকে গ্রহণ করে তরুণদের রাজনীতির সম্মুখভাগে এগিয়ে দিতে হবে।
তরুণদেরও একটা বিষয়ে খুব বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন। তাঁরা আগামীর বাংলাদেশের ধারক ও বাহক। তাঁদের দ্বারা কোনোভাবেই যেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বীজের অঙ্কুরোদগম না হয়। দলমত-নির্বিশেষে সব ইতিহাসের কান্ডারিদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের সংস্কৃতি গড়ে তোলা তরুণদের একান্ত কর্তব্য। গতানুগতিক রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বিদ্যমান থাকলে তরুণদের দ্বারা পরিবর্তন কখনোই সম্ভব হবে না, জনগণও আস্থা হারাবে। যেটা জাতির জন্য হতাশাব্যঞ্জক হতে পারে।
লেখক: সমাজকর্মী ও শিক্ষার্থী