আমি কোনো সময়েই একটা সাধারণ পুতু-পুতু মার্কা গল্প বলি না—যে একটি ছেলে একটি মেয়ে প্রেমে পড়েছে, প্রথমে মিলতে পারছে না, তাই দুঃখ পাচ্ছে, পরে মিলে গেল বা একজন পটল তুলল—এমন বস্তাপচা সাজানো গল্প লিখে বা ছবি করে নির্বোধ দর্শকদের খুব হাসিয়ে বা কাঁদিয়ে ওই গল্পের মধ্যে ইনভলভ করিয়ে দিলাম, দুই মিনিটেই তারা ছবির কথা ভুলে গেল, খুব খুশি হয়ে বাড়ি গিয়ে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। এর মধ্যে আমি নেই।
আমি প্রতি মুহূর্তে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে বোঝাব ‘ইট ইজ নট অ্যান ইমেজিনারি স্টোরি’ বা ‘আমি আপনাকে সস্তা আনন্দ দিতে আসিনি’। প্রতি মুহূর্তে আপনাকে হ্যামার করে বোঝাব যে যা দেখছেন তা একটা কল্পিত ঘটনা, কিন্তু এর মধ্য দিয়ে যেটা বোঝাতে চাইছি আমার সেই থিসিসটা বুঝুন, সেটা সম্পূর্ণ সত্যি। সেটার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করানোর জন্যই আমি আপনাকে এলিয়েনেট করব প্রতি মুহূর্তে।
যদি আপনি সচেতন হয়ে ওঠেন, ছবি দেখে বেরিয়ে এসে বাইরের সেই সামাজিক বাধা বা দুর্নীতি বদলানোর কাজে লিপ্ত হয়ে ওঠেন, আমার প্রটেস্টকে যদি আপনার মধ্যে চারিয়ে দিতে পারি, তবেই শিল্পী হিসেবে আমার সার্থকতা।
এই জন্যই বলছি ইনভলভমেন্ট হচ্ছে শিল্পীর, এলিয়েনেশন হচ্ছে অডিয়েন্সের। আমি যে কতগুলো কল্পিত ঘটনা ও চরিত্র সাজিয়ে গল্প বলছি, তার মধ্যে কিছু বক্তব্য রাখছি, সেগুলো দেখে আপনারা আবার ভুল কি ঠিক, ভালো কি মন্দ তা বিচার করুন, যদি ভালো বোধ করেন তবে বাইরে গিয়ে বাস্তবকে বদলানোর কাজে নিযুক্ত হোন। এই এলিয়েনেশন সকল আধুনিক শিল্প বা অন্য শিল্পেরও লক্ষ্য।
সূত্র: সাক্ষাৎ ঋত্বিক, পৃষ্ঠা-২২