চোখ পরীক্ষার জন্য অপটোমেট্রিস্ট নেই। তবে কাজটি ঠিকই চলছে। যিনি এসব পরীক্ষার কাজ করেন, শিক্ষার্থীসহ সবাই তাঁকে অপটোমেট্রিস্ট হিসেবেই জানেন। আসলে তিনি অফিস সহায়ক। এ রকম আরও নানা ‘নেই’ আর ঘাটতিতে ভুগছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টার। অথচ এটিই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একমাত্র চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র।
চিকিৎসাকেন্দ্রের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার সাজ্জাদ হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে এখানে চোখের অবস্থা, লেন্স ইত্যাদি পরীক্ষা করার জন্য কোনো অপটোমেট্রিস্ট নেই। এ কারণেই ১৭-১৮ বছর যাবৎ এই কাজ করে যাচ্ছেন একজন অফিস সহায়ক।
গত রবি ও সোমবার চিকিৎসাকেন্দ্রে গেলে চিকিৎসকদের ‘উদাসীনতা’, ওষুধের ঘাটতিসহ নানা সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান চোখ ও মাথাব্যথা নিয়ে এসেছিলেন ডাক্তার দেখাতে। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলে নুসরাত অভিযোগ করেন, ডাক্তার তাঁর কথা শোনেননি। তিনি মোবাইল ফোনে ব্যস্ত ছিলেন। সেখানকার অফিস সহায়ক তাঁকে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী ইমন বলেন, মেডিকেল সেন্টারে পাওয়া পরামর্শে যে চশমা নিয়েছেন, সেটি দিয়ে তিনি ভালো দেখেন না। বরং চোখ ও মাথাব্যথা হচ্ছে।
কেন্দ্রের চোখসংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা কর্মীর নাম মো. শাহজাহান ওরফে আজাদ। তাঁর নিয়োগ হয়েছিল অফিস সহায়ক পদে। আজকের পত্রিকাকে মো. শাহজাহান বলেন, প্রশিক্ষিত কর্মী না থাকায় তিনিই কাজটি করেন।
চোখের ডাক্তার জাকির হোসেনের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। রোগীদের সঙ্গে আমিই সবচেয়ে বেশি কথা বলি।’
মেডিকেল সেন্টার সূত্র বলছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে প্রতিদিন ১৩০ থেকে ১৪০ জন রোগী এখানে সেবা নেন। এর অ্যালোপ্যাথিক বিভাগে মোট চিকিৎসক ১৭ জন। তার মধ্যে নিয়মিত রোগী দেখেন ১২ জন। চোখ এবং নাক, কান ও গলা (ইএনটি) রোগ বিভাগে একজন করে এবং দন্ত বিভাগে আছেন দুজন চিকিৎসক। ইএনটির বিশেষজ্ঞ সপ্তাহে মাত্র দুদিন বসেন। ডিউটি রোস্টার অনুযায়ী দিনে তিন-চারজন চিকিৎসক উপস্থিত থাকেন। কোনো দিন মাত্র একজনও থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে পাঁচটি পদ। ল্যাবে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সেখানকার পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রগুলো ২০-৩০ বছরের পুরোনো।
নানা ধরনের সমস্যা
রোববার পায়ে আঘাতের ব্যথা নিয়ে আসেন ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মো. ইমরান হোসেন। চিকিৎসক তাঁকে নাপা খাওয়ার পরামর্শ দেন। মেডিকেল সেন্টারে সাধারণ ওষুধটি থাকা সত্ত্বেও তাঁকে বাইরে থেকে কিনে নিতে বলা হয়। পরে এই প্রতিবেদক কর্তৃপক্ষের কাছে এর কারণ জানতে চাইলে তাঁরা এটিকে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ বলে দাবি করেন।
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আরেক শিক্ষার্থী শিহাব উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চর্মরোগের ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম। আমাকে বলা হলো, বাইরে থেকে দেখান। এখানে ডাক্তার নেই।’
এ ব্যাপারে চিফ মেডিকেল অফিসার রাজিয়া রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অভিযোগগুলো যে ভিত্তিহীন, এমন না। তবে আমাদের লোকবল এবং সরবরাহে কিছু ঘাটতি রয়েছে। সক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশি রোগীকে সেবা দিচ্ছি।’
চোখের ডাক্তার জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজিয়া রহমান বলেন, ‘ডাক্তার জাকির যথেষ্ট আন্তরিকতা নিয়েই রোগী দেখেন। উনার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আসার কথা না।’
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা বলেন, ‘সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে।’