হোম > ইসলাম

তীব্র শীতে মুমিনের অনুভব ও দোয়া

মুহিব্বুল্লাহ কাফি

আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮: ৩৫

সৃষ্টি জগতের সবকিছুই পরিবর্তনশীল। কোথাও যেমন গুড়ুম গুড়ুম মেঘের ডাক, রিনিঝিনি বৃষ্টি, কোথাও আবার প্রখর রোদের তপ্ত পরিবেশ। কোথাও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মাঝেও হেসে ওঠে সূর্য; কোথাও ঝলমল মিষ্টি রোদে ছেয়ে যায় প্রকৃতি। কোথাও আবার অন্ধকারের চাদরে মুড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। প্রকৃতির এ পরিবর্তন, দিন-রাতের লুকোচুরি খেলার পেছনেও রয়েছে আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব, তাঁর সুনিপুণ পরিকল্পনা। লুক্কায়িত রয়েছে তাঁর নিদর্শন ও হেকমত।

আল্লাহ তাআলা প্রতিটি সৃষ্টিকে নিজ নিজ সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। দিনরাত যেমন তাঁর হুকুমের অনুগত, তেমনি প্রতিটি ঋতু তার নিজ নিজ নির্ধারিত সময়ে পরিবর্তনশীল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি সবকিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে।’ (সুরা কামার: ৪৯)

পৃথিবীর সব দেশেই শীত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঋতু। এরও অস্তিত্বের পেছনের কারিগর আল্লাহ তাআলাই। কী নিপুণ হাতে শীতের সঙ্গে জাহান্নামের সম্পৃক্ততার রহস্য গেঁথে দিয়েছেন! মূলত শীতের অস্তিত্ব ও রহস্যের উৎপত্তি হলো জাহান্নামের শ্বাসপ্রশ্বাস। কখন শীত আর কখন গরম পড়ে প্রকৃতিতে সে ব্যাপারে হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করে বলেছে, হে রব, আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলেছে। আমাকে শ্বাস গ্রহণের অনুমতি দিন। তখন তিনি তাকে দুটি শ্বাসপ্রশ্বাস ফেলার অনুমতি প্রদান করেন। একটি শ্বাসপ্রশ্বাস ছাড়ে শীতকালে আর একটি শ্বাসপ্রশ্বাস ছাড়ে গ্রীষ্মকালে। কাজেই তোমরা গরমের যে প্রচণ্ডতা এবং শীতের যে তীব্রতা অনুভব করে থাকো, তা জাহান্নামের শ্বাসপ্রশ্বাসের কারণেই।’ (বুখারি: ৩২৬০)

প্রতিটি জিনিসের দুটো দিক রয়েছে; ভালো ও মন্দ। দুটোর প্রভাবও পড়ে প্রকৃতিতে ভিন্নরূপে। আর প্রকৃতিতে আবহাওয়ার রদবদলে মৌসুমি অসুখবিসুখ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকের ওপর মন্দ প্রভাব বিস্তার করে। সেখান থেকে জ্বর, সর্দি ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয় অনেকে। আর অজ্ঞতাবশত ওই অসুখবিসুখকে তাঁরা অভিশাপ দিয়ে থাকেন। এমনটি করতে রাসুল (সা.) নিষেধ করেছেন। সে জন্য তিনি আল্লাহর কাছে প্রতিটি জিনিসের ভালো দিক প্রার্থনা এবং এর অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতেন। এ কারণেই তিনি কোনো বস্তুকে অভিশাপ দিতেও নিষেধ করেছেন।

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) একদিন উম্মু সায়িব কিংবা উম্মুল মুসাইয়্যাব (রা.)-এর কাছে গিয়ে বললেন, ‘তোমার কী হয়েছে, হে উম্মু সায়িব অথবা উম্মুল মুসাইয়্যাব? কাঁদছ কেন?’ তিনি বললেন, ‘ভীষণ জ্বর, একে আল্লাহ বর্ধিত না করুন।’ তখন তিনি বললেন, ‘তুমি জ্বরকে গালমন্দ কোরো না। কেননা জ্বর আদম সন্তানের পাপরাশি মোচন করে দেয়, যেভাবে হাঁপর লোহার মরীচিকা দূরীভূত করে।’ (মুসলিম: ৬৪৬৪)

শীত মৌসুমেও রাসুল (সা.) তীব্র শীতের মন্দ বা অকল্যাণ থেকে আল্লাহ তাআলার পানাহ চাইতেন। এবং তিনি শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচার দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। দোয়াটি হলো, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মা আশাদ্দা বারদা হাজাল ইয়াউম, আল্লাহুমা আজিরনি মিন জামহারিরি জাহান্নাম।’ অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আজকের দিনের কী প্রবল শীত! হে আল্লাহ, জাহান্নামের তীব্র ঠান্ডা থেকে আমাকে রক্ষা করুন।’

এ দোয়ার ফজিলত সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যদি কোনো দিন তীব্র শীত পড়ে, সে সময় কেউ এ দোয়া পড়ে, তখন আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের উদ্দেশে বলবেন, আমার এই বান্দা তোমার তীব্র ঠান্ডা থেকে আশ্রয় চেয়েছে। আর আমি তোমাকে সাক্ষী রাখছি যে আমি তাকে এই তীব্র ঠান্ডা থেকে রক্ষা করব।’ (আমালুল ইয়াউম ওয়াল লাইল, হাদিস: ৩০৬)

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

নবীজির শানে শব্দ প্রয়োগে সতর্কতা

কোরআনের আলো বিলাচ্ছেন দৃষ্টিহীন হাফেজ রুমান

হাঁচির সময়ের তিনটি দোয়া