ট্রাভিস হেডকে নিয়ে কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে বক্সিং ডে টেস্টের আগে পুরোপুরি ফিট আছেন ভারতের মাথাব্যথা! তাঁকে রেখেই বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির চতুর্থ টেস্টের একাদশ ঘোষণা করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। আগামীকাল বাংলাদেশ সময় ভোরে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে মাঠে নামবে দল দুটি। চলতি সিরিজে ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে রয়েছেন হেড। দুটি সেঞ্চুরিসহ করেছেন ৪০৯ রান, গড় ৮১.৮০।
ম্যাচের আগে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স বলেছেন, ‘ট্র্যাভিস খেলতে প্রস্তুত। সে খেলবে। সে গতকাল ও আজকে বেশ কিছু জিনিস করেছে। তার কোনো ইনজুরি শঙ্কা নেই। সে পুরোপুরি ফিট হয়েই খেলতে নামবে।’
তবে একাদশে নতুন বিধ্বংসী স্যাম কনস্টাসকেও রেখেছে অস্ট্রেলিয়া। বক্সিং ডে টেস্ট দিয়ে অভিষেক হচ্ছে তাঁর। টপ অর্ডারে নাথান ম্যাকসুয়েনির জায়গায় খেলবেন তিনি। গত অক্টোবরে ১৯ বছর বয়সে পারা এই কনস্টাসের সামনেই এখন অস্ট্রেলিয়ার ৯৫ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভাঙার সুযোগ। তাঁর জন্য রান করতে হবে এমন নয়। এই ওপেনার ব্যাট হাতে মাঠে নামলেই গড়ে ফেলবেন রেকর্ড। কী সেই কীর্তি?
মেলবোর্ন টেস্টে যদি কনস্টাস খেলেন তবে তিনিই হবেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে কমবয়সী টেস্ট ওপেনার। ভাঙবেন ১৯২৯ সালে করা আর্চি জ্যাকসনের রেকর্ড। সে বছর অ্যাডিলেডে ১৯ বছর ১৪৯ দিনে অভিষেক হয় সাবেক এই ওপেনার। অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে কমবয়সী ওপেনার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন প্রয়াত ফিল হিউজ। ২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তাঁর অভিষেক হয় ২০ বছর বয়সে।
কনস্টাসের প্রশংসা করে কামিন্স বলেছেন, ‘সে একজন চমৎকার প্রতিভাবান ক্রিকেটার। আমরা আশা করছি সে ও উসমান আমাদের জন্য দারুণ ভিত্তি গড়ে দেবে উদ্বোধনী জুটিতে।’
ঘরোয়া লিগে ৫-৬ বছর খেলে, ঝালিয়ে-পুড়িয়ে একটু বয়স হলেই অস্ট্রেলিয়া দলে ডাক পড়ে। এই এক রীতিও তাদের, অন্যদের চেয়ে এ জায়গায় তারা সব সময় কিছুটা আলাদা। ডেভিড ওয়ার্নারের বিদায় নেওয়ার পর তাঁর জায়গায় এখনো থিতু হতে পারেননি কোনো ব্যাটার। স্টিভেন স্মিথকে দিয়েও চেষ্টা চালিয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট, কিন্তু কাজে আসেনি এই চেষ্টা। তারপর নাথান ম্যাকসুয়েনির ডাক পড়ে।
ম্যাকসুয়েনি অনেক দিন ধরেই ঘরোয়া লিগে পারফর্ম করছিলেন। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে চলতি সিরিজে তিন টেস্ট খেলে দলের প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি এই ওপেনার। সর্বোচ্চ ইনিংস ৩৯ রান। ৬ ইনিংস মিলিয়ে করেছেন ৭২ রান। বাদ পড়েন চতুর্থ ও পঞ্চম টেস্টের দল থেকে।
ম্যাকসুয়েনির জায়গায় কনস্টাসকে নেওয়ার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার চেয়ে প্রতিভাকে মূল্যায়ন করেছে অস্ট্রেলিয়া। কনস্টাস একটি করে লিস্ট ‘এ’ ও স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। ব্যাট হাতে একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে করেছেন ৫৬ রান, গত সপ্তাহে বিগ ব্যাশের এই ম্যাচে ২০ করেছিলেন ফিফটি। লিস্ট ‘এ’ ম্যাচটিতে করেছেন ১০ রান।
তবে প্রথম শ্রেণির ১১ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরি ও ৩ ফিফটিতে কনস্টাসের ৭১৮ রান, গড় ৪২.২৩। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার প্রাইম মিনিস্টার একাদশের হয়ে ও ভারতের বিপক্ষে ৯৭ বলে ১০৭ রানের দারুণ এক ইনিংসও খেলেছেন সিডনির এই ক্রিকেটার। নভেম্বরেও অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দল ও ভারতের ‘এ’ দলের সিরিজে ছিলেন কনস্টাস, করেছিলেন একটি ফিফটিও। আকাশ দীপ, হারশিত রানা, মোহাম্মদ সিরাজ, রবীন্দ্র জাদেজা, নিতিশ কুমার রেড্ডিদের মোকাবিলার করার অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর।
এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার একাদশে ফিরেছেন স্কট বোল্যান্ড। তৃতীয় টেস্টে চোটে পড়া জশ হ্যাজলউডের জায়গায় ফিরেছেন তিনি। দ্বিতীয় টেস্টেও একাদশে ছিলেন বোল্যান্ড। প্রথম টেস্ট ভারত জেতার পর দ্বিতীয় টেস্ট জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। তৃতীয় টেস্ট বৃষ্টির কারণে হয় ড্র। তাতে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে বর্তমানে ১-১ সমতায় রয়েছে।
বক্সিং ডে টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার একাদশ: উসমান খাজা, স্যাম কনস্টাস, মার্নাস ল্যাবুশেন, স্টিভেন স্মিথ, ট্রাভিস হেড, মিচেল মার্শ, অ্যালেক্স কেরি (উইকেটরক্ষক), প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), মিচেল স্টার্ক, নাথান লায়ন ও স্কট বোল্যান্ড।