‘এই বেঁচে আছি’–গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের স্ত্রী লাবণ্যের এই কথার মাঝেই যেন লুকিয়ে অনেক কষ্ট, অনেক হাহাকার। গত ৫ জুলাই দাবা খেলতে খেলতেই না-ফেরার দেশে পাড়ি জমান জিয়া। তাঁর মৃত্যুতে একমাত্র সন্তান তাহসিন ও স্ত্রী লাবণ্য যেন অথই সাগরে পড়েছেন।
একদিকে ছেলের ক্যারিয়ার, আরেক দিকে সংসারটা টেনে নেওয়া। এর মধ্যে অনেকেই সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েও দেননি। শুধু আশাই দেখাচ্ছেন। তাতে দিনকে দিন সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। তারপরও স্বপ্ন দেখা থেমে নেই ফিদে মাস্টার তাহসিন তাজওয়ার জিয়ার। গত বছরের সেপ্টেম্বরে দাবা অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েও ভালো করেছিলেন জিয়াপুত্র। এবার তার লক্ষ্য অনূর্ধ্ব-২০ ওয়ার্ল্ড জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে খেলা। যদিও সেখানে অংশ নিতে পারবেন কি না সেটা এখনো অনিশ্চিত।
এ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি মন্টেনিগ্রোতে শুরু হবে ছোটদের এই বড় প্রতিযোগিতা। শেষ হবে মার্চের ৮ তারিখ। সেখানে যাওয়ার জন্য তিন থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার স্পনসর দরকার তাহসিনের। ছেলের এমন স্বপ্ন পূরণে মা লাবণ্যও বসে নেই। ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে, যদিও এখনো পাননি কোনো দিশা, ‘জানি না কীভাবে কী হবে। খুবই বাজে সময় যাচ্ছে। জিয়া থাকলে এতটা কষ্ট হতো না আমাদের। আমার বোন কিছুটা সহযোগিতা করছেন। ফেডারেশনকেও বলেছি, দেখি কী হয়। আসলে সবাই শুধু আশাই দেখায়।’
তাহসিনের পড়াশোনা চালাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে জিয়ার পরিবারকে। আবার দাবার টুর্নামেন্টগুলোর স্পনসর খুঁজে বেড়ানো। সব মিলিয়ে তাহসিনের মনটাও ভারাক্রান্ত, ‘বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে প্রতিটা মুহূর্তে তার অভাব অনুভব করছি। পদে পদে আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে। আর্থিকভাবেও খুব সমস্যা যাচ্ছে। জানি না কবে এই সংকট শেষ হবে।’
জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য যদি দাবার মতো কোনো চাল থাকত, তাহলে নিশ্চিত এই দিন দেখতে হতো না তাহসিনের! ২০২০ সালে ক্যানডিডেট মাস্টার আর ২০২২ সালে ফিদে মাস্টার খেতাব অর্জন করা এই দাবাড়ু তাতেও থামতে চান না। যে দাবার বোর্ড হাতে দিয়ে লড়াইয়ের পথ দেখিয়েছিলেন তার বাবা। সেই বোর্ডে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে আরও এগিয়ে যেতে চান তাহসিন, ‘আমার চেষ্টা থাকবে বেশি বেশি টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার। যদি ওয়ার্ল্ড জুনিয়রে খেলতে পারি তাহলে রেটিংটা আরও বাড়িয়ে নিতে পারব। তা ছাড়া নর্ম পাওয়ারও একটা সুযোগ রয়েছে।’
বর্তমানে তাহসিনের রেটিং ২৩২৩। নর্ম রয়েছে একটি। যদি আর দুটি নর্ম পেয়ে যান, তাহলে আন্তর্জাতিক মাস্টারও বনে যাবেন তিনি, যেখানে তাহসিনের আগে নাম উঠিয়েছেন মনন রেজা নীড় ও ফাহাদ রহমান।