হোম > সারা দেশ > রাজশাহী

ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ, যুবলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬: ৩০
রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে তরুণীর সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীতে ব্যক্তিগত ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে কলেজছাত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক যুবলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পুলিশ মামলা না নেওয়ায় ওই কলেজছাত্রী আদালতে অভিযোগ করেন। আদালত অভিযোগ গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন বলে তাঁর আইনজীবী জানান।

ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী রাজশাহীর একটি সরকারি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করেন। আজ বুধবার দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে তিনি এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।

অভিযুক্ত যুবলীগ কর্মীর নাম হিটলার মাহমুদ (৩৬)। জেলার বাগমারা উপজেলার হাসনিপুর গ্রামে তাঁর বাড়ি। তিনি আওয়ামী লীগের বাগমারার সাবেক ‘এমপির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত। হিটলারের বাবা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং আওয়ামী লীগের নেতা। এত দিন হিটলারের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেননি ওই ছাত্রী। আওয়ামী সরকারের পতনের পর গত ২৮ নভেম্বর তিনি হিটলারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেছেন।

ওই ছাত্রীর দাবি, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপির প্রভাবের কারণে তিনি আগে বিচার পাননি। হিটলার যুবলীগ কর্মী হলেও তাঁর মামা ও চাচা বিএনপির নেতা। এখন মামলা করলেও তিনি সুবিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন। তাঁরা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘মামলা করার পরেও এ পর্যন্ত কোনো তদন্ত কর্মকর্তার আমার সঙ্গে কথা বলেননি। এভিডেন্স চাননি। আমি আওয়ামী লীগের আমলে বিচার পাইনি। এখনো কি বিচার পাব না?’

সংবাদ সম্মেলনে ওই কলেজছাত্রী জানান, ২০২০ সালের মে মাসে হিটলার তাঁর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে বাগমারার ভবানীগঞ্জ তক্তপাড়ায় তাঁর এক বোনের বাসায় এবং রাজশাহী নগরের লক্ষ্মীপুর ঝাউতলা মোড়ের এক বাসায় নিয়ে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন। কিন্তু বিয়ের জন্য চাপ দিলে তিনি প্রতিবারই এড়িয়ে যেতেন।

ওই ছাত্রী বিয়ের দাবিতে একবার হিটলারের বাড়িতেও গিয়ে ওঠেন। কিছুদিনের মধ্যে তাঁকে বিয়ে দিয়ে আনা হবে—বলে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন হিটলারের বাবা। তিনি এ-ও বলেন, এভাবে বিয়ে করালে তাঁদের সম্মান ক্ষুণ্ন হবে। কিন্তু পরবর্তী সময় বিয়ের আয়োজন করা হয়নি।

ওই ছাত্রী জানান, প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি হিটলারকে এড়িয়ে যেতে শুরু করেন। তখন হিটলার তাঁকে গোপনে ধারণ করা কিছু ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও পাঠান। তাঁর কথামতো না চললে এগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখান। এভাবে তিনি সম্পর্ক চালিয়ে যেতে বাধ্য হন। ওই ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে হিটলার দিনের পর দিন ধর্ষণ করেন।

ভুক্তভোগী ছাত্রী জানান, হিটলারের বিরুদ্ধে মামলা করতে তিনি গত ২০ নভেম্বর বাগমারা থানায় যান। সেদিন ওসি তৌহিদুল ইসলাম শুধু একটি অভিযোগ নিয়ে রাখেন। এক লাখ টাকা ঘুষ নিয়েও তিনি মামলা রেকর্ড করেননি। পরে ২৮ নভেম্বর তিনি আদালতে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলার আবেদন করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় হুমকি দেওয়ার অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন।

ওই ছাত্রী বলেন, ‘মামলা করার পর আমি জেনেছি হিটলার ইতিমধ্যে তিনটি বিয়ে করেছে। প্রথম স্ত্রীর নাম রিতা। এরপর রাজিয়া সুলতানা ইভা নামের এক মেয়ের সঙ্গে চার বছর প্রেম করে বিয়ে করে। পরে তালাক হয়ে যায়। বর্তমানে মিতু নামের আরেক মেয়ের সঙ্গে হিটলারের প্রেমের সম্পর্ক আছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষকের সঙ্গেও তার প্রেমের সম্পর্ক আছে। নারীলোভী হিটলার মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে টাকাপয়সাও হাতিয়ে নেয়। আমি চাই, আর কেউ যেন হিটলারের ফাঁদে না পড়ে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগ কর্মী হিটলার মাহমুদ বলেন, ‘প্রেম তো স্বাভাবিক ঘটনা, প্রেম হতেই পারে। কিন্তু ওই মেয়ে ভালো না। বিয়ে করতে চাইলে বিয়ে করে না। ১০ লাখ, ২০ লাখ টাকা চায়। সে যেসব অভিযোগ এনেছে, সেগুলো সত্য নয়। সে মামলা করেছে, সেটা আমরা আইনগতভাবেই মোকাবিলা করব। আমিও সংবাদ সম্মেলন করব।’

ভুক্তভোগী ছাত্রীর আইনজীবী আরিফুর রহমান জুয়েল বলেন, ‘হুমকি দেওয়ার মামলায় আসামি হিটলার মাহমুদসহ অন্য আসামিরা আদালতে হাজির হয়েছিলেন। তাঁরা বন্ড দিয়ে জামিন পেয়েছেন। আর ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের মামলার আবেদনের পর আদালত পিবিআইকে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন আসার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত।’

বিদ্যালয়ে সভাপতি পদ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৭

গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ, বিএমডিএ অফিস ঘেরাও

নাটোর-বগুড়া মহাসড়কে বাসের ধাক্কায় ২ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

১৫ পুলিশ হত্যা মামলায় সাবেক মন্ত্রী লতিফ বিশ্বাস কারাগারে