রাজশাহীর বাঘায় বিদ্যালয়ের সভাপতির পদ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৭ জন আহত হয়েছেন।
রোববার (৫ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার আড়পাড়া বাজারসংলগ্ন বিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও বাউসা ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি অনোয়ার হোসেন পলাশ ও ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান সভাপতি রেজাউল করিমের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়।
এতে পলাশ গ্রুপের আহতরা হলেন উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের মুনসাদ আলীর ছেলে মানিক হোসেন (৪০), একই গ্রামের মানিকের ছেলে রুহান আলী (২৩), গাজীউর রহমানের ছেলে সুজন হোসেন ওরফে বাবু (৩৩)।
রেজাউল গ্রুপের আহতরা হলেন বাউসা হেদাতিপাড়া গ্রামের তফেজ প্রামাণিকের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩৮), তেথুলিয়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে জাফর আলী (৪০), বাউসা মাঝপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে রানা ইসলাম (১৮), বাউসা হেদাতীপাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে ইনামুল হক (৩৫)।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাকসুদুল হক জানান, গুরুতর আহত মানিক হোসেন ও রফিকুল ইসলামকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৫ বছর আগে আড়াপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হোসেনের ছেলে আনোয়ার হোসেন পলাশের স্ত্রী জুবাইদা বেগম বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
৫ আগস্টের পর দেশের পটপরিবর্তন হলে ওই বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির জন্য আবেদনপত্র জমা দেন অনোয়ার হোসেন পলাশ ও পল্লিচিকিৎসক মহসিন আলী। তাঁর বিপরীতে দলবল নিয়ে একই পদে আরেকটি আবেদন জমা দেন রেজাউল করিমের সমর্থক ওয়ালিউর রহমান বিকুল।
আজ রোববার সকালে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন তাঁদের সমর্থিত অর্ধশতাধিক লোকজন নিয়ে ওয়ালিউর রহমান বিকুলের পক্ষে সভাপতির আবেদনপত্র নিয়ে আড়পাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে আসেন। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থাকার কারণে তাঁরা বিদ্যালয় মাঠে অবস্থান নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক জানান, সেই সময় কয়েকজন শিক্ষক প্লাস্টিকের চেয়ার নিয়ে বাইরে রোদে বসে ছিলেন। প্রধান শিক্ষককে না পেয়ে তাঁরা বাইরের চেয়ার ও বিদ্যালয়ের ভেতরে থাকা কম্পিউটারের মাউথ পিস, কি-বোর্ড ভাঙচুর করে। তা দেখে স্থানীয় লোকজন এসে বাধা দিলে দুই পক্ষ হাতুড়ি-লোহার রড, চায়নিজ কুড়াল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হলে উভয় পক্ষের লোকজন আহত হয়।
আড়পাড়া ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গতকাল শনিবার দিঘা গ্রামে মিটিং করে তারা পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে বিদ্যালয়ে এসে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। সভাপতির পদের জন্য দলবল নিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে তারা চড়াও হয়। তাদের প্রতিহত করলে তারা হামলা করে এবং বিদ্যালয়ের চেয়ার, মাউথ পিস, কি-বোর্ড ভাঙচুর করে। পরে সংঘর্ষে রূপ নেয়।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিমের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বাউসা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন জানান, তাঁরা ওয়ালিউর রহমান বিকুলের পক্ষে সভাপতির পদে আবেদনপত্র জমা দিতে যান। মোটরসাইকেল নিয়ে কিছু লোক বিদ্যালয় মাঠে নামতেই আনোয়ার হোসেন পলাশ পক্ষের লোকজন তাদের ওপর হামলা করে। তাদের সঙ্গে থাকা আরও লোকজন একত্র হয়ে পাল্টা আক্রমণ করলে সংঘর্ষ বাধে।
দেড় ঘণ্টা পরে তাঁদের লোকজন নিয়ে চলে আসেন বলে জানান নাসির উদ্দিন। তবে বিদ্যালয়ের চেয়ার, মাউথ পিস, কি-বোর্ড ভাঙচুরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি।
আনোয়ার হোসেন পলাশ জানান, একই দল করলেও রেজাউল করিম প্রভাব বিস্তার করে উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাঁর সমর্থিত লোককে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি করার জন্য জেলা বিএনপির প্যাডে, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সুপারিশ করে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। একইভাবে তাঁর বাবার প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়েও প্রভাব বিস্তার করে ওয়ালিউর রহমান বিকুলকে সভাপতি করার জন্য তাঁর পক্ষে আবেদন জমা দিতে আসেন। তাঁদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ সংঘর্ষ বাধিয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিবর রহমান বলেন, ‘উপজেলায় মিটিংয়ের কারণে বিদ্যালয়ে ছিলাম না।’ পরে শিক্ষকের মাধ্যমে চেয়ার, মাউথ পিস, কি-বোর্ড ভাঙচুরের বিষয়টি জেনেছেন।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব আশরাফ আলী মলিন বলেন, বিএনপিতে বড় দল হিসেবে গ্রুপিং থাকতেই পারে। বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। নেতা-কর্মীদের নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধান করা হবে।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য উজ্জ্বল গ্রুপের নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘৫ তারিখের ছাত্র অভ্যুত্থানের পরে বাউসা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া। তারা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ার হোসেন পলাশ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বলের সমর্থক আর রেজাউল করিম জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের সমর্থক।
বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ ফ ম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’