মাসুম ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা দীর্ঘদিনের। আমরা ভিন্ন ভিন্ন থিয়েটার দলে কাজ করতাম। তিনি ঢাকা পদাতিক করতেন, আমরা আরণ্যক। তবু আমাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। বিশেষ করে আমার গুরু মামুনুর রশীদ তাঁকে ভীষণ স্নেহ করতেন। মাসুম ভাইয়ের সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্কটাও ছিল দৃঢ়।
মাসুম ভাই যখন আহ্ছানিয়া মিশনে কাজ করতেন, তখন তাঁর বেশ কিছু গান করেছি আমি। তিনি যখন একুশে টেলিভিশনে কাজ করলেন, প্যাকেজের আওতায় বিটিভির জন্য কাজ করলেন, তাঁর বেশির ভাগ নাটকেই মূল চরিত্রে অভিনয় করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তিনি আমাকে ভীষণ ভালোবাসতেন। আমার অভিনয়ের প্রতি তাঁর দারুণ আস্থা ছিল। নিজের নাটক-সিনেমায় তিনি শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের জীবনসংগ্রামের কথা তুলে ধরতেন। সুখে-দুঃখে তিনি আমার খোঁজখবর নিতেন। তিনি যখন প্রথম অনুদানের চলচ্চিত্র পেলেন, সেখানেও আমি অভিনয় করেছিলাম। কিন্তু দীর্ঘদিন বিরতির কারণে পরে আর কাজ করা হয়নি।
মাসুম ভাই ছিলেন একনিষ্ঠ একজন অভিনেতা। নানা সময় নানা কাজে তাঁর সঙ্গে আড্ডা হতো, কথা হতো। অভিনেতা হিসেবে তিনি যখন যে চরিত্র করেছেন, তখন সেই চরিত্রটাই হয়ে উঠতেন। ওই চরিত্রে একেবারেই বুঁদ হয়ে থাকতেন। তিনি যেহেতু বাম ঘরানার লোক ছিলেন, তাঁর লেখা ও কাজে সব সময় শ্রমজীবী মানুষের কথা উঠে আসত।
ছাত্র হিসেবেও মাসুম ভাই খুবই মেধাবী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন থেকে থিয়েটারের সঙ্গে জড়িত তিনি। প্রথম টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন ১৯৮৫ সালে। দীর্ঘ কর্মজীবনে চার শতাধিক নাটকের পাশাপাশি ‘গহীনে শব্দ’, ‘এই তো প্রেম’, ‘গাড়িওয়ালা’সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
শিল্পী মাসুম আজিজ কখনোই কোনো কাজের সঙ্গে আপস করেননি। জানি সবাই একদিন চলে যাবেন। তবু আমি মনে করি, মাসুম ভাইয়ের যে বয়স, সেই বয়সে তাঁর চলে যাওয়াটা মন খারাপ করে দেয় আমাদের। আরও অনেক কাজ করার ছিল তাঁর। বেঁচে থাকলে আরও অনেক কিছুই তিনি আমাদের দিয়ে যেতে পারতেন। তাঁর এই চলে যাওয়া আমাদের বিষণ্ন করে দিয়েছে।
একনজরে মাসুম আজিজ
জন্ম: ১৯৫২ সালে সিলেটে (দেশের বাড়ি পাবনার ফরিদপুর উপজেলায়)
পড়াশোনা: রংপুর জিলা স্কুল, কারমাইকেল কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
সংগীত: ছোটবেলায় শাস্ত্রীয় সংগীত শিখেছেন। অভিনয়ে আসার আগে সংগীতই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান
প্রথম অভিনয়: বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ‘কিংশুক যে মরুতে’ মঞ্চনাটকে
প্রথম নির্দেশনা: ঋত্বিক ঘটকের লেখা নাটক ‘জ্বালা’
নাটকের দল: ঢাকা পদাতিক
টিভিতে প্রথম অভিনয়: ১৯৮৫ সালে। অভিনয় করেছেন চার শতাধিক টিভি নাটকে
সিনেমায় প্রথম: উত্তম আকাশ পরিচালিত ‘মমতাজ’ (২০০৫)। উল্লেখযোগ্য সিনেমা ‘ঘানি’, ‘গহীনে শব্দ’, ‘গাড়িওয়ালা’, ‘এই তো প্রেম’, ‘গেরিলা’, ‘লালচর’, ‘রূপগাওয়াল’, ‘ইন্দুবালা’ ইত্যাদি
পরিচালনায় প্রথম: সরকারি অনুদানের সিনেমা ‘সনাতন গল্প’ (২০১৮)
পদক-পুরস্কার: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (২০০৬), একুশে পদক (২০২২)
মৃত্যু: ১৭ অক্টোবর ২০২২