‘আমি সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে চেয়েছি, কিন্তু পারিনি। মুখের ভেতর গলগল করে নদীর ঘোলা জল ঢুকেছে। ঘাটের দিকে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করছি, কিন্তু পারছি না। শাড়ি আরও জড়িয়ে যাচ্ছে। অসাড় করে দিচ্ছে আমার পা। মা আমাকে টেনে নদীর কূলে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু তীব্র স্রোতে কুলিয়ে উঠতে না পেরে আমার হাত ছেড়ে দেন তিনি। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই তলিয়ে যান।’ এমন বর্ণনা দেন পঞ্চগড়ের বোদায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়া তনুশ্রী রায়।
তনুশ্রী ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দেবীপুর ইউনিয়নের পাঞ্জিয়াপাড়া গ্রামের স্কুলশিক্ষক শক্তিপদ রায়ের মেয়ে। তিনি ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
গত রোববার পঞ্চগড়ের বোদার বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন মা ঝরনা রানী বালা, স্বজনসহ একই পরিবারের ১১ জন। তনুশ্রীসহ ছয়জন বেঁচে গেলেও তাঁর মা ও পরিবারের অন্যরা করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাটে নৌকাডুবিতে মারা গেছেন। মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরার সেই স্মৃতি ভুলতে পারছেন না তনুশ্রী। সেদিনের ভয়াল দৃশ্য বারবার তাঁর চোখে ভেসে উঠছে। মা ও স্বজন হারানোর বেদনায় মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি।
গতকাল রোববার তনুশ্রীর মা ও তাঁর স্বজনদের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। তনুশ্রী বলেন, ‘আমার মা আমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন। মা বলতেন, “তুমি ভালো মানুষ হয়ে বটগাছের মতো মানুষকে ছায়া দেবে, মমতা দেবে।” অসহায় মানুষের সেবায় আত্মোৎসর্গ করারও পরামর্শ দিতেন তিনি আমাকে। মায়ের সেই স্বপ্ন পূরণে হয়তো আমি বেঁচে গেছি।’
তনুশ্রী আরও বলেন, ‘চোখের সামনে মায়ের মৃত্যু দেখলাম। আর কেউ যেন এমন ঘটনার শিকার না হয়। সবার মা রইল, শুধু আমার মা আকাশে তারা হয়ে গেল।
তনুশ্রীর মা ঝরনা রানী বালাসহ পরিবারের পাঁচজনের মৃতদেহ ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উদ্ধার করে। বুধবার মৃত ব্যক্তিদের সৎকার হয়।’
তনুশ্রীর বড় বোন তুষ্টি রংপুর কারমাইকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের সম্মান শ্রেণির ছাত্রী। বাবা ও তাঁর বড় বোন পুণ্যার্থী যাত্রা অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। মা ও তাঁর নানির বাড়ির ৯ জন মিলে মহালয়া অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন।
ওই দুর্ঘটনার জন্য পূজা আয়োজক, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের উদাসীন ও দায়িত্ব অবহেলাকে দায়ী করেন তনুশ্রী।