২৪ জানুয়ারি, ১৮৪৮। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সাটার’স ক্রিকের তীরে সোনা খুঁজে পান এক ব্যক্তি। এর মধ্যমে সূচনা হয় গোল্ড রাশের। দলে দলে স্বর্ণসন্ধনীরা ছুটে আসতে থাকেন সাটার’স ক্রিকে। আর এই সোনা খুঁজে পাওয়ার ঘটনা চিরতরে বদলে দেয় বুনো পশ্চিমের ইতিহাসের গতিপথ।
স্যাক্রামেন্টো উপত্যকার পূর্বে আমেরিকান নদীর থেকে আসা একটি খাল সাটার’স ক্রিক। ১৮৩৯ সালে মেক্সিকান ক্যালিফোর্নিয়ায় (তখন মেক্সিকোর অন্তর্ভুক্ত ছিল এই আমেরিকান রাজ্যটি) আসা সুইস অভিবাসী জন অগাস্টাস সাটারের নামে রাখা হয় ক্রিকটির নাম।
সাটার মেক্সিকোর নাগরিকত্ব পান এবং অনুদান হিসেবে সবুজ স্যাক্রামেন্টো উপত্যকায় প্রায় ৫০ হাজার একর জমি পান। যেখানে তিনি নিজের একটি ছোটখাটো সাম্রাজ্য গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। এখানে একটি শক্তিশালী দুর্গ তৈরি করেন, যা কালক্রমে তার গড়ে তোলা শহর নিউ হেলভেশিয়ার কেন্দ্রে পরিণত হয়। এখানে খামার করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও প্রচুর গবাদিপশু কিনে আনেন। শুধু তাই না, তার এলাকার প্রতিরক্ষার জন্য একটি কামানও আনান।
১৮৪০-র দশকে, সাটারের দুর্গ ক্যালিফোর্নিয়ায় খামার ও র্যাঞ্চ তৈরি করতে আসা অ্যাংলো-আমেরিকান অভিবাসীদের প্রথম বিরতিস্থল হয়ে ওঠে। মেক্সিকোর প্রদেশটিকে ক্রমেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকা আমেরিকানদের নিয়ন্ত্রণে পড়া থেকে রক্ষা করার শপথ নিলেও সাটার বুঝতে পেরেছিলেন যে তার ভবিষ্যৎ প্রতিপত্তি ও সম্পদ লাভ এই অ্যাংলো বসতি স্থাপনকারীদের ওপরই নির্ভর করছে। 1
মিলের চাকা ঘুরতে জলের প্রবাহ ব্যবহার করার জন্য মার্শাল একটি অগভীর নালা খননের কাজ তদারকি করেছিলেন। ১৮৪৮ সালের ২৪ জানুয়ারি সকালের ঘটনা। মার্শাল সদ্য কাটা নালার দিকে তাকাতে কালো মাটিতে জ্বলজ্বলে একটা কিছুর উপস্থিতি আবিষ্কার করলেন।
আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে চমকে উঠলেন। নালার বড় একটা অংশ জুড়ে সোনালি জ্বলজ্বলে টুকরো বা কণা দেখা যাচ্ছে, আর এগুলো স্বর্ণের মতোই মনে হচ্ছে। ছুটে গিয়ে বিষয়টি সাটারকে জানালেন।
আর ক্যালিফোর্নিয়ার গোল্ড রাশ সাটারের জন্য একটি বড় বিপর্যয় ডেকে আনল। এটা সত্যি গোল্ড রাশ কয়েক লাখ মানুষকে ক্যালিফোর্নিয়ায় টেনে আনে। কিন্তু প্রসপেক্টার বা স্বর্ণসন্ধানীদের সাটারের কৃষি সম্প্রদায়ে যোগদানের কোনো আগ্রহই ছিল না। এর বদলে তারা সাটারের সম্পত্তির বারোটা বাজাল স্বর্ণের খোঁজে। খাবারের জন্য তাঁর পশুদের জবাই করল আর ফসলের খেত মাড়িয়ে নষ্ট করল।
১৮৫২ সালের মধ্যে নিউ হেলভেশিয়া মোটামুটি এক ধ্বংসাবশেষে পরিণত হলো। সেই সঙ্গে কপাল পুড়ল সাটারের। ১৮৮০ সালে মারা যান তিনি। তবে এর আগ পর্যন্ত, অনিচ্ছাকৃতভাবে যে গোল্ড রাশ ডেকে আনেন তাতে যে ক্ষতি হয় তার জন্য সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়াতেই ব্যস্ত ছিলেন। যদিও এতে সফল হননি।
সূত্র: হিস্টরি চ্যানেল, উইকিপিডিয়া