আদিম মানুষের মতো দ্বিধান্বিত কেউ একজন সেটাকে তুলে নিয়েছে—সেটা কি ভেসে আসা এক অদ্ভুত সামুদ্রিক প্রাণী?—সেটা কি এক অদ্ভুত কিছু, যা হয়তো বালুর মধ্যে লুকিয়ে ছিল?—অথবা এমন কিছু যা হঠাৎ করেই আকাশ থেকে পড়েছে?—বেশ অদম্য আর বক্র, আবার বোধহীনের মতো চকচকে, ভেতর থেকে উজ্জ্বল প্রভা বেরিয়ে আসছে, একেক সময় একেক রূপ নিচ্ছে, মনে হচ্ছে, যেন একে যেকোনো রূপেই ব্যবহার করা যাবে, হাতের মুঠোয় নিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ওঠে...
সে রকমই শিল্পকে আমরা আমাদের হাতের মুষ্টিতে ধরে রেখেছি, আত্মপ্রত্যয়ীর মতো মনে করি—এ আমাদের নিজস্ব সম্পদ, এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ন্ত্রণ করি, একে নতুনত্ব দিই, পুনর্নির্মাণ করি, এর ফতোয়া দিই, টাকার জন্য বিক্রি করি, একে নিয়ে প্রভাবশালীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা করি এবং বিনোদনের সামগ্রীতে পরিণত করি বিভিন্ন সংগীতের আসরে আর রাতের ক্লাবগুলোতে। এবং একসময় এটি গতিনিরোধক কিংবা লাঠিতে পরিণত হয়, দিকপরিবর্তনের রাজনীতির অথবা ক্ষীণ সামাজিক প্রয়োজনে।
আমাদের এসব চেষ্টা দিয়ে শিল্পের ন্যূনতম পবিত্রতা ক্ষুণ্ন হয় না। কারণ, এর উৎসের গভীরে আমরা কখনোই যেতে পারি না। প্রত্যেক সময় এবং প্রত্যেক ব্যবহারে শিল্প তার অভ্যন্তরীণ রহস্যময় প্রভার ক্ষীণ অংশ সম্প্রদান করে থাকে আমাদের কাছে।
কিন্তু আমরা কি শিল্পের সব প্রভা হৃদয়ঙ্গম করতে পারি? কেউ কি নিশ্চিত করে শিল্পের সামগ্রিক ব্যাখ্যা দিতে পারবে? শিল্পের সব ঘটনারই কি তালিকা প্রণয়ন সম্ভব? সম্ভবত শিল্পকে অনুধাবন করতে গিয়ে আমাদের সমগ্র জীবনই পার হয়ে যায়, তারপরও শিল্প অধরা। কেননা, যেকোনো শিল্পের প্রতিই আমরা গভীর মনোযোগ দিই-না কেন, শুধু তা শুনি কিংবা দেখি আমরা; অবশ্য সে শোনায় কিংবা দেখায় অবজ্ঞার মাত্রাই বেশি থাকে এবং একসময় তাকে প্রত্যাখ্যানও করি। আমরা সব সময়ই পুরাতনের জায়গায় নতুনকে প্রতিস্থাপনের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকি এবং যখন সেই পুরাতন শিল্পকে নতুন করে উপস্থাপন করা হয়, আমরা স্মরণই করতে পারি না যে তা একসময় আমাদের অভিভূত করেছিল।
রুশ সাহিত্যিক আলেক্সান্ডার সলঝেনিতসিন ১৯৭০ সালে নোবেল পুরস্কার পান।