সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন
তখন ধূসর চোখের রুমানা উঠতি মডেল। অ্যারোমেটিক সাবানের একটা বিজ্ঞাপনে দেখা যেত তাঁকে। সমুদ্র তীরে আঙুল দিয়ে ‘ভালোবাসা’ লিখছেন তিনি—বিজ্ঞাপনে এমন একটা দৃশ্য আছে। আমি তত দিনে বানান করে পড়তে শিখে গেছি। চোখের সামনে যা পাই, তা-ই পড়ি। স্বভাবতই ওই বিজ্ঞাপন দেখে ‘ভালোবাসা’ শব্দটা পড়ে নিয়েছি। আমার শিশুমনে এতটুকু বুঝতাম যে, বাবা-মায়ের যে সম্পর্ক, সেটাই ভালোবাসা।
হঠাৎ একদিন আমার মনে হলো আমরা যে বাসাটায় থাকি, সেটাও একটা ভালো বাসা! আমি খড়িমাটি দিয়ে বড় করে বাসার দরজায় লিখলাম ‘ভালো বাসা’। রুমানার মতো এঁকে দিলাম ভালোবাসার চিহ্নও। খানিক বাদে পাশের বাড়ির পিচ্চি, যে কি না আমার চেয়ে বয়সে ছোট, সে দৌড়ে গিয়ে আমার বড় ভাইকে দিল নালিশ—‘ভাইয়া দেখে যান, আপু দরজার মধ্যে কী সব ভালোবাসার কথা লিখেছে।’
আমার বড় ভাই পড়ার টেবিল ছেড়ে হুড়মুড় করে উঠে এসে দেখলেন আমার ‘শিল্পকর্ম’। ‘এগুলা কী লিখেছিস?’ বলেই ভাইয়া দুমাদুম আমার পিঠে দু-চারটা কিল দিয়ে চলে গেলেন। ছোট্ট আমি কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কিছুক্ষণ কেঁদে নিলাম। মায়ের কাছে গিয়ে ঘটনার বর্ণনা দিতেই ভাইয়াকে ইচ্ছামতো বকে দিলেন। কিন্তু ভাইয়াকে বকা দিলে যে আমারও মন খারাপ হয়ে যায়! আর সেটা যে ভালোবাসাই, তা তখন বুঝতাম না।
কতবার যে দেখেছি তাঁদের, রাস্তার এপাশ-ওপাশ দাঁড়িয়ে থেকে বা দুই বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে ইশারায় কথা বলতে! মুঠোফোনের দিন আসার পর, আর ইশারা করতে হয়নি। দূর থেকে একে-অপরকে দেখে ফোনেই আলাপ চলতে থাকত। যদিও তাদের পরিণয়ের পরিণতি নেতিবাচক হয়েছিল। আমার খুব মন খারাপ হয়েছিল, যখন সেটা জেনেছিলাম। পাড়ার আরেক আপুরও একই অবস্থা—প্রেমে ব্যর্থতা।
আজ যখন এক সহকর্মীর দিকে আরেক সহকর্মীর ভালোবাসার দৃষ্টি আমার নজর এড়ায়নি, তখন পুরোনো স্মৃতি মনে করে একটু মুচকি হেসে নিলাম। সব প্রকারের ভালোবাসাই এখন ভালো লাগে, বিপজ্জনক মনে হয় না আর। কেননা, ভালোবাসার কাছে বিপদ তো তুচ্ছ।