Ajker Patrika
হোম > বিশ্লেষণ

স্বর্গ থেকে নেমে আসার দাবি করলেন কেন মোদি

অনলাইন ডেস্ক

স্বর্গ থেকে নেমে আসার দাবি করলেন কেন মোদি

আগামী শনিবার (১ জুন) শেষ হতে যাচ্ছে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম তথা শেষ ভাগের ভোট। তবে প্রায় দেড় মাস ধরে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনের প্রচারণায় সম্প্রতি নিজেকে আধ্যাত্মিক পুরুষ হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করেছেন দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বলা বাহুল্য, মোদির এমন মনোভব তাঁর বিরোধী শিবিরে ব্যাপক হাস্যরস এবং উপহাসের জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ এই বিষয়ে মোদিকে ইঙ্গিত করে বাঁকা মন্তব্যও ছুড়ে দিচ্ছেন। 

আধ্যাত্মিক দাবির বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে—গত ২৪ মে এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোদি দাবি করেছিলেন, ঈশ্বর কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। 

এর আগে ভারতের নিউজ-এইটটিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘মা যত দিন বেঁচে ছিলেন আমার মনে হতো, হয়তো জৈবিকভাবেই আমার জন্ম হয়েছে। কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পর নানা রকম অভিজ্ঞতা থেকে আমি নিশ্চিত, ভগবান আমাকে পাঠিয়েছেন। আমার মধ্যে যে শক্তি রয়েছে তা সাধারণভাবে জন্ম নেওয়া কোনো মানুষের থাকতে পারে না!’ 

মোদির এসব মন্তব্যের জের ধরে বিরোধী নেতা-কর্মীরা বিদ্রূপ করার পাশাপাশি তাঁকে ঈশ্বর হিসাবে চিত্রিত করে নানা ধরনের মিমও তৈরি করছেন। নিউজ এইটটিনে করা মন্তব্যের জের ধরে গত ২৩ মে বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী এক সমাবেশে বলেছিলেন, ‘ভারতের সব মানুষকে নরেন্দ্র মোদি বলেছেন—আপনাদের সবাই জৈবিক প্রাণী, কিন্তু আমি নই। ঈশ্বর আমাকে স্বর্গ থেকে একটি মিশনে পাঠিয়েছেন!’ 

রাহুল আরও বলেন, ‘এখন যদি আপনি রাস্তায় এমন কারও সঙ্গে দেখা করেন এবং তিনি যদি আপনাকে একইরকম কথা বলেন, তবে আপনি তাকে কী বলবেন? হয়তো বলবেন—ভাই আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে আমার কাজ করতে দিন।’ 

মোদি বা তাঁর ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির আধ্যাত্মিক বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পার্টির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র দাবি করেছিলেন, হিন্দুদের প্রধান দেবতা ভগবান জগন্নাথও মোদির ভক্ত ছিলেন। পরে অবশ্য মোদি নিজেই তাঁর অধস্তন নেতার এমন মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন। 

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে নিজেকে আধ্যাত্মিক হিসেবে মোদি উপস্থাপন করেছেন মূলত তাঁর প্রতি ভারতের সাধারণ ধর্মভীরু মানুষের সমর্থনকে আরও জোরালো করার জন্য। তাঁর হিন্দুবাদী এজেন্ডার জন্য আরও বেশি ভোট পেতে এটি একটি প্রচারণার কৌশল। 

বলা হচ্ছে, মোদির আধ্যাত্মিক দাবি-দাওয়া ডালপালা মেলতে শুরু করেছিল গত জানুয়ারিতে। সে সময় তিনি অযোধ্যায় দেবতা রামের একটি বিশাল মন্দির উদ্বোধন করেন। হিন্দুরা বিশ্বাস করে, ওই স্থানটিই ছিল দেবতা রামের জন্মস্থান। 

মোদি যদি এবারও নির্বাচনে বিজয়ী হন তবে তিনি ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৪ সাল জওহরলাল নেহরুর প্রধানমন্ত্রিত্ব করা তিন মেয়াদের রেকর্ডের সমান হবেন। মে মাসেই একটি জরিপে দাবি করা হয়েছিল, আসন্ন নির্বাচনে মোদির প্রতি ভারতের ৭৪ শতাংশ মানুষের সমর্থন রয়েছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, মোদি প্রধানমন্ত্রী হয়তো হয়ে যাবেন, তবে নির্বাচনে এত বেশি সংখ্যক মানুষের সমর্থন তিনি পাবেন না। 

বিরোধী দলগুলোও নির্বাচনী প্রচারণায় ভোটারদের সতর্ক করে আসছে যে, মোদির আরেকটি মেয়াদ ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে ক্ষুণ্ন করবে। 

কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, মোদির সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলো দেশের হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠকে আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে তাঁর হতাশারই প্রতিফলন ঘটায়। তিনি অনুভব করেছেন, নির্বাচন তার প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না। 

এ বিষয়ে ভারতের জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক স্টাডিজ বিষয়ের অধ্যাপক অজয় দর্শন বেহারা বলেছেন, ‘এটি এক ধরনের শেষ চেষ্টা। কারণ অন্যান্য অনেক বিষয় প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করেনি।’ বেহারা মনে করেন, মোদির এমন আবেদন পরোক্ষভাবে ধর্ম এবং রাম মন্দিরের বিষয়গুলোর সঙ্গে যুক্ত। এই বিষয়টি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দু ছিল বলে মনে করা হয়। 

তবে এ ধরনের পরিস্থিতির পরও মোদির আরেকটি শক্তিশালী ম্যান্ডেট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। কারণ তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের কেউই ভোটারদের মধ্যে শক্তিশালী আবেদন তৈরি করতে পারেননি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মোদির সমর্থকেরাও তাঁর সমালোচনা নিয়ে ততটা বিচলিত নয়।

ভারতের আকাশে রুশ-মার্কিন দ্বৈরথ

মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিত করায় ইউক্রেনের পরিণতি কী হতে পারে

যুক্তরাষ্ট্রের সরে দাঁড়ানোর শঙ্কা, আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকে চীনের আধিপত্য বাড়ছে কি

আমেরিকা ছাড়া শুধু ইউরোপ কি পারবে ইউক্রেনকে রক্ষা করতে

প্রতিরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র-নির্ভরতা কমাতে কতটা সক্ষম ইউরোপ

ট্রাম্প-জেলেনস্কি দ্বন্দ্বে যুদ্ধ জয়ের চেয়েও বড় বিজয় পুতিনের

সেকেন্ড রিপাবলিক: সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার নজির বেশি

একযোগে দুই পরাশক্তির চাপে ইউক্রেন

আইএমএফ ও শ্রীলঙ্কার স্বার্থের মধ্যে যেভাবে ভারসাম্য রেখে চলেছেন দিসানায়েকে

ভারতে ইলন মাস্কের টেসলা, উদ্বিগ্ন দেশীয় গাড়ি নির্মাতারা