হোম > বিশ্লেষণ

ট্রাম্পের বিজয়ে যেভাবে লাভবান হবেন ইলন মাস্ক

অনলাইন ডেস্ক    

গত বুধবার ট্রাম্প তার বিজয়ী বক্তৃতায় ইলন মাস্কের কথা উল্লেখ করেছেন। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে বড় অবদান রেখেছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। আর এই সমর্থন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির জন্য লাভজনক হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক ও প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা।

গত বুধবার ট্রাম্প তার বিজয়ী বক্তৃতায় ইলন মাস্কের কথা উল্লেখ করেছেন। তার প্রশাসনের অধীনে মাস্ককে যথাযথ সম্মান দেওয়া হবে বলে ইঙ্গিত দেন ট্রাম্প। ইলন মাস্ককে রিপাবলিকান পার্টির ‘নতুন তারকা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি। এ ছাড়াও মাস্ককে ‘বিস্ময়কর’ ব্যক্তি হিসেবেও উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প।

মাস্ককে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের প্রতিভাবানদের রক্ষা করতে হবে।’

মাস্কের মোট সম্পদ ২৬৪ বিলিয়ন ডলার। তাই কোনো সমস্যা ছাড়াই ১০০ মিলিয়ন ডলার বা তারও বেশি একটি নির্বাচনী প্রচারণায় বিনিয়োগ করতে পারেন তিনি।

গতকাল বুধবার সেই বিনিয়োগে প্রাথমিক ফল পেয়েছেন। গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি টেসলার সিইও ইলন মাস্ক। তিনি এই কোম্পানির ১৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক। গতকাল তার শেয়ারগুলো ওয়াল স্ট্রিটে প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে যায়, যা তার ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক ড্যান আইভেস বলেছেন, ট্রাম্পের বিজয় টেসলার মূল্য ২০০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়াতে পারে, যার ফলে মাস্কের মোট সম্পদ প্রায় ২৬ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পাবে।

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্য আইভেস বলেন, টেসলা এবং মাস্কের জন্য সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হবে ট্রাম্পের বিজয়। এই বিজয়ে বেশ কিছু সুবিধা পাবেন মাস্ক। যেমন চীনে তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর ট্রাম্পের শুল্ক বা আমদানি কর আরোপ করার সম্ভাবনা।

মাস্কের মালিকানাধীন রকেট কোম্পানি স্পেসএক্স অনেকগুলো সরকারি চুক্তি পেয়েছে। শুধু গত মাসেই এটি ইউএস স্পেস ফোর্স থেকে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের চুক্তি নিশ্চিত করেছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, স্পেসএক্স এবং টেসলা গত দশ বছরে অন্তত ১৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সরকারি চুক্তি পেয়েছে।

বাইডেন প্রশাসনের অধীনে স্পেস ফোর্স থেকে চুক্তি পেয়েছেন মাস্ক। ধারণা করা হচ্ছে যে, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে এই ধরনের ফেডারেল চুক্তির প্রবাহ কমবে আরও বাড়বে। জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অধ্যাপক এবং সরকারি নীতি বিশেষজ্ঞ রিচার্ড পিয়ার্স বলেছেন, তিনি ‘নিশ্চিত’ যে মাস্কের ব্যবসাগুলো আরও চুক্তি পেয়ে উপকৃত হবে।

ট্রাম্পের বিজয় ইলন মাস্কের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’–এর ক্ষমতাকেও আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। তিনি ২০২২ সালে টুইটার কিনতে ৪৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিলেন এবং প্ল্যাটফর্মটি নতুনভাবে নামকরণ করেন।

এক্স মাস্কের মালিকানায় থাকা অবস্থায় প্ল্যাঠফর্ম ডানপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি প্রচারণায় প্রভাব রেখেছে এবং ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় ভূমিকা পালন করেছে। মাস্ক বিতর্কিত ব্যক্তিত্বদের পুনরায় প্ল্যাটফর্মে ফিরিয়ে এনেছেন। যেমন: ষড়তন্ত্র তত্ত্বের সমর্থক অ্যালেক্স জোনস।

এক্সের নিয়ন্ত্রণ থাকায় নিজস্ব ট্রাম্পপন্থী বার্তাগুলো প্ল্যাটফর্মে প্রচার করার সুযোগ পেয়েছে মাস্ক। তার অ্যাকাউন্টটি সবচেয়ে বড়। তার অ্যাকাউন্টে ২০ কোটিরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে। ট্রাম্পের প্রচারণার সময় এটি অত্যন্ত সক্রিয় ছিল। কখনো কখনো একদিনে ১০০ বারও পোস্ট করা হয়েছে এবং প্রতিটি পোস্টে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। ট্রাম্পকে সমর্থনের জন্য মিডিয়া ইকোসিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করেছে এক্স।প্ল্যাটফর্মটির মালিকানা নিয়ে বিলিয়নিয়ার মাস্ক স্বল্পমেয়াদি আর্থিক লাভের জন্য কখনো আপস করতে রাজি হননি।

টুইটারের ইউরোপীয় অপারেশনগুলোর প্রাক্তন প্রধান ব্রুস ডেইসলি বলেন, এতে আরও শক্তিশালী অ্যালগরিদম চালু করে যা সাধারণত মন্তব্যকারীরা, সাংবাদিকেরা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ব্যবহার করতে ডানপন্থী মতামত প্রকাশ করেন। মানুষ যে ধরনের কনটেন্ট গ্রহণ করছে তার ওপর প্রভাব ফেলেছে ইলন মাস্ক ও তার প্ল্যাটফর্মটি।

এছাড়া, ট্রাম্প প্রশাসনে মাস্কের জন্য পদ থাকতে পারে। গত সেপ্টেম্বর মাসে ট্রাম্প বলেছিলেন যে, তিনি একটি সরকারি কার্যক্রম দক্ষতা কমিশন গঠন করবেন, যার নেতৃত্ব দেবেন মাস্ক। যদি মাস্ক পূর্ণকালীন সরকারি চাকরি গ্রহণ করেন, তাহলে কোম্পানিগুলোর পরিচালনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অন্য বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তির হাতে তুলে দিতে হবে।

বোস্টন কলেজের আইন বিভাগের অধ্যাপক বায়ার্ন কুইন বলেন, মাস্ক খণ্ডকালীন সদস্য হিসেবে একটি প্রেসিডেন্ট কমিশনে যোগ দিলে কোম্পানিগুলো ট্রাস্টে রাখার প্রয়োজন হবে না।’

মাস্ক ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, একটি সরকারি কার্যক্রম দক্ষতা কমিশন স্পেসএক্সেকে সাহায্য করতে পারে। এর আগে এক্স প্ল্যাটফর্মে তিনি বলেন, তার ব্যবসা যদি ‘আমলাতন্ত্রর জটিলতায় না পড়ে’ তাহলে তারা মঙ্গল গ্রহে আরও দ্রুত পৌঁছাতে পারবে।

ফেডারেল নিয়মকানুন মাস্কের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) এর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গত সেপ্টেম্বরে এই সংস্থার সঙ্গে বিরোধের পর তিনি সতর্ক করেন যে, কোম্পানি ‘এফএফএ-এর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে মামলা করবে।’

জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিয়ার্স বলেন, মাস্ক এখন ফেডারেল নিয়ন্ত্রক এবং প্রসিকিউটরদের কাছ থেকে আরও সহজ প্রতিক্রিয়া আশা করতে পারেন। সব ফেডারেল নিয়ন্ত্রক এবং প্রসিকিউটররা প্রেসিডেন্টের জন্য কাজ করেন। প্রেসিডেন্ট তাদের কিছু করতে বা না করতে বলতে পারেন এবং যদি তারা অবাধ্য হন, তবে তিনি তাদের বরখাস্ত করতে পারেন।

মাস্কের অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্টার্টআপ এক্সএআই, যার বাজারমূল্য শিগগিরই প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার হবে। মস্তিষ্কে চিপ বসানো কোম্পানি নিউরালিংক, যার বাজারমূল্য ৮ বিলিয়ন ডলার।

মাস্ক ইতিমধ্যেই একটি বৈশ্বিক খ্যাতি ও ক্ষমতার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। তবে গত বুধবারের বিজয়ী বক্তব্যে ট্রাম্প এটি আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরেন।

হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ পাকিস্তান, সম্পর্কের রসদ ভারতবিরোধিতা

বাংলাদেশ ও পাকিস্তান নিয়ে মার্কিন ‘দুমুখো নীতি’ শোধরাবেন কি ট্রাম্প

দিনে শান্তির কথা রাতে গাজায় হামলা, ইসরায়েল কি আদৌ যুদ্ধবিরতি চায়

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েন: সংকটে রোগী আর শিক্ষার্থীরা

বুলডোজার যেভাবে মোদির ভারতের প্রতীক হয়ে উঠল

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক কি তবে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে মোড় নেবে

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে হঠাৎ কেন এত খাতির করছে ভারত

ট্রুডোর প্রতি কানাডীয়দের ভালোবাসা কীভাবে ফুরিয়ে গেল

ট্রাম্প কি সত্যিই গ্রিনল্যান্ড কিনতে চান, কিন্তু কেন

ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম থেকে ফ্যাক্ট-চেকিং সরিয়ে জাকারবার্গ কি ট্রাম্পের বশ্যতা স্বীকার করলেন

সেকশন