আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মোবাইল ফোন একটি নিত্য অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কল থেকে শুরু করে ব্যাংকিং সেবা—কী নেই এতে? এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার আমাদের জীবন বদলে দেওয়ার পাশাপাশি আমাদের অভ্যাস এমনকি সংস্কৃতি-সভ্যতাকেও অনেকটা বদলে দিয়েছে। কিন্তু প্রযুক্তির অগ্রগতি এত দ্রুত হচ্ছে যে এখন নতুন করে ভাবতে হচ্ছে স্মার্টফোনের এই রমরমা সময় আর কত দিন? কোন প্রযুক্তি প্রতিস্থাপন করবে স্মার্টফোনকে?
স্মার্টফোনের ভবিষ্যৎ কী—এর যথোপযুক্ত জবাব দেওয়া কঠিন। তবে এরই মধ্যে স্মার্টফোনের বিকল্প হওয়ার মতো একাধিক প্রযুক্তি হাজির হয়েছে বাজারে। প্রখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে তিনটি প্রযুক্তি অগ্রগণ্য। সেগুলো হলো—ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি (ভিআর), অগমেন্টেড রিয়্যালিটি (এআর) ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ভয়েস কমান্ড। বলা হচ্ছে, এই প্রযুক্তিগুলো স্মার্টফোনের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। এমনকি এসব প্রযুক্তি স্মার্টফোনকে ধুলোয় মিশিয়েও দিতে পারে।
স্মার্টফোনের বিকল্প হিসেবে কেন এই তিনের ওপরই বাজি ধরছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা, তা এই তিন প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্যের ওপর নজর দিলেই বোঝা যাবে। ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি হলো কম্পিউটার নির্মিত এমন একধরনের ত্রিমাত্রিক সিমুলেশন, যা আপাতদৃষ্টিতে বাস্তব বলে মনে হয় এবং যেখানে ব্যবহারকারী বিশেষ ধরনের হেডসেট ও গ্লাভস ব্যবহার করে সেই সিমুলেশনে নিজের উপস্থিতি বজায় রাখতে পারেন। অন্যদিকে, অগমেন্টেড রিয়্যালিটি হলো এমন একটি প্রযুক্তি, যেখানে ব্যবহারকারীর সামনে বাস্তব জগতের কম্পিউটার নির্মিত ত্রিমাত্রিক চিত্র হাজির করে। তবে এ ক্ষেত্রেও ব্যবহারকারীর বিশেষ ধরনের গ্লাস চোখে পরার প্রয়োজন হয়। আর ভয়েস কমান্ড বিষয়টির সঙ্গে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। আজকাল তো বিশ্বের প্রায় সব ভাষায় কমান্ড নিতে পারে গুগলের ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট। বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এই তিন প্রযুক্তিতে আরও বেশি ফিচার সংযুক্ত করার চেষ্টা করছে।
বিশ্বের প্রযুক্তি খাতের প্রধান প্রধান শক্তিগুলো বিশেষ করে অ্যাপল, মেটা ও মাইক্রোসফট উল্লিখিত প্রযুক্তিগুলোতে এরই মধ্যে বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে অ্যামাজন, গুগল ও টিকটকের মালিক প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সও। তালিকায় রয়েছে প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সনি করপোরেশনও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মালিক প্রতিষ্ঠান মেটা তো এরই মধ্যে অগমেন্টেড ও ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির সম্মিলিত প্রযুক্তির মেটাভার্সের ঘোষণা দিয়েছে। ফলে এ ক্ষেত্রে যে সামনের দিনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে, তা খুব সহজেই অনুমেয়।
এই তিনের বাইরে আরও বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি স্মার্টফোনের ভবিষ্যৎকে চোখ রাঙাচ্ছে। এর মধ্যে একটির ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস নিজেই। বিখ্যাত স্প্যানিশ সাময়িকী মার্কা এ নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। বিল গেটস ‘ইলেকট্রনিক ট্যাটু’ নামক এক প্রযুক্তির কথা বলেছেন, যেটা আগামী দিনে স্মার্টফোনের বিকল্প হতে পারে। এই প্রযুক্তির মূল বিষয় হলো, একধরনের বিশেষ ট্যাটুর সাহায্যে ত্বকে স্মার্টফোনের চিপগুলো স্থাপন করা হবে। সেই চিপগুলো ব্যবহার করেই ত্বকের ওপরই স্মার্টফোনের সব সুবিধা ব্যবহার করা সম্ভব হবে। তবে মার্কার প্রতিবেদন অনুসারে এই প্রযুক্তি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম মিডিয়ামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্মার্টফোনের আরেক বিকল্প হতে পারে ব্রেসলেট। ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ছিল সিকরেট ব্রেসলেট। এই ব্রেসলেট থেকে লেজার রশ্মি বেরিয়ে হাতের কবজির ত্বকের ওপর স্মার্টফোনের অপশন-সংবলিত একটি ইন্টারেকটিভ স্ক্রিন দেখাবে এবং ব্যবহারকারী সেই স্ক্রিনেই অস্থায়ীভাবে স্মার্টফোনের সব সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন। এবং প্রয়োজনমতো আবার সেই স্ক্রিন গায়েব করে দিতে পারবেন। তবে মিডিয়ামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফরাসি উদ্যোগটি এখন আর সক্রিয় নয়। ব্রেসলেটের মতো রিংয়ের ব্যাপারটিও একই।
কেবল তা-ই নয়। অগমেন্টেড, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি ও ভয়েস কমান্ড নিয়ে সতর্কতার প্রয়োজনও রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। গবেষকেরা বলছেন—এসব ক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগের আগে প্রচুর ভেবেচিন্তে আগানো প্রয়োজন। কারণ, এসব ক্ষেত্রে প্রায়ই ভুল উদ্যোগ গৃহীত হতে পারে। তবে সব মিলিয়ে আগামী দিনে স্মার্টফোনের ভবিষ্যৎ যে বেশ কিছুটা হুমকির মুখে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিশ্লেষণ সম্পর্কিত পড়ুন: