Ajker Patrika
হোম > বিশ্লেষণ

হাইপ্রোফাইল বৈঠকে দুধের বাচ্চা নিয়ে হাজির ইলন মাস্ক, কী বোঝাতে চান তিনি

হাইপ্রোফাইল বৈঠকে দুধের বাচ্চা নিয়ে হাজির ইলন মাস্ক, কী বোঝাতে চান তিনি
ওভাল অফিসে ছোট ছেলেকে নিয়ে হাজির ইলন মাস্ক। ছবি: এএফপি

হাইপ্রোফাইল বৈঠকে দুধের বাচ্চা সঙ্গে নিয়ে হাজির হন ইলন মাস্ক। তিনি শুধু শীর্ষ ধনীই নন, এখন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের প্রধানও।

সর্ব সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ব্রিফিং এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে শিশুসন্তানসহ ইলন মাস্কের উপস্থিতি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এটি নতুন নয়। ইলন মাস্কের সন্তানেরা এমন অনেক জায়গায় গেছে, যা অনেকে কখনো দেখারও সুযোগ পাবে না। বিদেশি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক থেকে শুরু করে স্পেসএক্সের রকেট উৎক্ষেপণের কন্ট্রোলরুম পর্যন্ত, মাস্কের সন্তানেরা তাদের বাবার প্রযুক্তি, ব্যবসা এবং এখন রাজনীতির সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই টেক বিলিয়নিয়ার ও টেসলার মালিককে নবগঠিত সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) নেতৃত্ব দিয়েছেন। ফলে প্রায়ই তাঁর সন্তানদের যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে দেখা যাচ্ছে।

মাস্কের চার বছরের সন্তান ‘লিল এক্স’। গত বুধবার ওভাল অফিসে একটি ট্যান পি কোট ও কলারযুক্ত শার্ট পরা অবস্থায় প্রেসিডেন্টের রেজোলিউট ডেস্কের কোনা ধরে ঝুলতে দেখা গেছে তাকে। গত বৃহস্পতিবার এক্স ও তার দুই ভাই–বোন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকে উপহার নিয়েছে। ওই সময় তাদের বাবা মোদির সঙ্গে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন নিয়ে আলোচনা করছিলেন। সঙ্গে দুই নারীকেও দেখা যায়।

ওয়াশিংটনে সরকারি দায়িত্ব নেওয়ার আগেও মাস্ককে প্রায়ই তার সন্তানদের সঙ্গে নিতে দেখা গেছে—তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক, অশউইৎস কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে একটি স্মারক অনুষ্ঠান এবং টাইম ম্যাগাজিনের একটি অনুষ্ঠানেও তাঁকে সন্তানসহ দেখা গেছে। টাইম ম্যাগাজিন ইলন মাস্ককে ২০২১ সালের ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রচ্ছদ করে।

কিন্তু দুধের বাচ্চাদের নিয়ে সবখানে কেন হাজির হন ইলন মাস্ক? যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগের অধ্যাপক কার্ট ব্র্যাডক বলেন, ‘জনসমক্ষে উপস্থিতিতে সন্তানদের সঙ্গে রাখা খুবই রাজনৈতিক পদক্ষেপ, এতে নিজেকে আরেকটু বেশি ব্যক্তিত্বপূর্ণ বা হাসিখুশি হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। সেই সঙ্গে জনসাধারণের কাছে নিজের প্রতিচ্ছবি আরও মানবিক হিসেবে তুলে ধরা যায়।’ তবে ব্র্যাডক এও মনে করেন যে, ইলন মাস্কের এতটুকু বাচ্চাকে ওভাল অফিসে আনার সিদ্ধান্তটি অস্বাভাবিক।

ইলন মাস্কের ৩০ মিনিটের প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় এক্সকে বিরক্ত মনে হচ্ছিল। সে তার বাবাকে অনুকরণ করছিল, একবার মেঝেতে বসে পড়ে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তার দিকে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাতে দেখা যায়, আবার একটু হাসছিলেনও তিনি। একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল, এক্স ওই ঘরে থাকা কাউকে ‘চুপ’ করতে বলছে।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইলন মাস্কের বৈঠক। ছবি: নরেন্দ্র মোদির এক্স হ্যান্ডল
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইলন মাস্কের বৈঠক। ছবি: নরেন্দ্র মোদির এক্স হ্যান্ডল

অধ্যাপক ব্র্যাডক বলেন, তিনি মনে করেন, এ ধরনের অনুষ্ঠানে ইলন মাস্কের শিশুসন্তানদের আনাটা ইচ্ছাকৃত। এটা একধরনের চিত্তবিক্ষেপ বা মনোযোগ সরানোর একটি কৌশল, যা মাস্ক ও ট্রাম্প উভয়ের জন্যই উপকারী!

অধ্যাপক ব্র্যাডক আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, এখানে কিছুটা কৌশল রয়েছে—কিছু বিষয়ের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করা, যার মাধ্যমে অন্য বিষয়গুলোর দিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’

পাঁচটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচার–প্রচারণা নিয়ে কাজ করেছেন কৌশলগত যোগাযোগ পরামর্শক জন হ্যাবার। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। হ্যাবারের মতে, ইলন মাস্কের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সন্তানদের প্রায়ই উপস্থিত হওয়া এবং ভাইরাল মুহূর্ত তৈরি করা ট্রাম্পের জন্য উপকারী। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের জন্য, যত বেশি বিশৃঙ্খলা, যত বেশি আয়োজন, তত কম কেউ নির্দিষ্ট বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারে। বিশৃঙ্খলা ট্রাম্পের পক্ষেই কাজ করে।’

এদিকে ইলন মাস্কের প্রাক্তন এবং এক্সের মা গ্রাইমস ওভাল অফিসে তাঁর ছেলের উপস্থিতির সমালোচনা করেছেন। তিনি এক্সে একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘তাকে এভাবে প্রকাশ্যে আনা উচিত নয়। আমি এটি দেখিনি...তবে আমি খুশি যে সে (এক্স) ভদ্র ছিল। হায়!’

২০২২ সালের ভ্যানিটি ফেয়ার লেখা একটি নিবন্ধে গ্রাইমস বলেছিলেন, তিনি তাঁর ছেলেকে মানুষের মনোযোগের কেন্দ্রে রাখার পক্ষপাতি নন। তিনি বলেন, ‘পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে যা কিছুই চলুক না কেন, আমি মনে করি, বাচ্চাদের এসবের বাইরে থাকা দরকার, আর এক্স এসবের বাইরেই। আমার মনে হয়, ই (ইলন মাস্ক) তাকে সত্যিই একজন প্রোটিজি (অভিভাবকত্বের অধীন) হিসেবে দেখছে এবং তাকে সবকিছুতেই নিয়ে যাচ্ছে।...এক্সের অবস্থা এমন। আচ্ছা, হ্যাঁ, আমি জানি না।’

রাজনীতির অনেক আগে থেকেই মাস্ক তাঁর সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে ঘোরেন। এক দশক আগে, যখন ইলন মাস্ক নানা প্রকল্প নিয়ে দিনরাত খাটছেন, প্রোফাইল তৈরি করছেন এবং তাঁর বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানি টেসলার দিকে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে মরিয়া, তখন বিভিন্ন ইভেন্টে সন্তানদের উপস্থিতি অস্বাভাবিক ছিল না।

২০১৫ সালে সিলিকন ভ্যালিতে টেসলার একটি কারখানা উদ্বোধনের আগে বিশ্লেষক এবং সাংবাদিকেরা অপেক্ষা করছিলেন, তখন মাস্কের পাঁচ সন্তানকে করিডর দিয়ে একে অপরের পেছনে দৌড়াতে এবং হাসতে দেখা গিয়েছিল। এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে মাস্কের সন্তানদের এই উচ্ছ্বাসপূর্ণ উপস্থিতি নিশ্চিতভাবে একটি শিথিল এবং আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করেছিল। অন্য কোনো কোম্পানির পক্ষে এমনটি করা কিন্তু বেশ কঠিন কাজই। কারণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক অনুষ্ঠানে কোম্পানির প্রধান নির্বাহীর ছোট সন্তানদের উপস্থিতি অদ্ভুতই মনে হতো। এমনকি এটিকে মনোযোগ বিচ্যুতি হিসেবেও দেখা হতো।

তিনজন নারীর গর্ভে ইলন মাস্কের ১২টি সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় পুত্র বলা যেতে পারে—এক্স A-Xii, ‘লিল এক্স’ নামেই বেশি পরিচিত সে। এই ‘এক্স’ অক্ষর নিয়ে ইলন মাস্কের একধরনের আবেশ বা সংস্কার আছে বলা চলে। টুইটার কেনার পর এই নামই দিয়েছেন তিনি।

চার বছরের এক্সকে মাস্ক নিজেই ‘ইমোশনাল সাপোর্ট হিউম্যান’ বলে অভিহিত করেছেন। মাস্কের জীবনীকার ওয়াল্টার আইজ্যাকসন ‘দ্য ডায়েরি অব অ্যা সিইও’ পডকাস্টে বলেছেন, মাস্ক তাঁর সন্তানদের প্রতি ‘গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ এবং ‘তাদের প্রতি প্রায় মোহাচ্ছন্ন’।

তিনি বলেন, ‘সন্তান, প্রেমিকা, স্ত্রীদের সঙ্গে সবকিছুতেই একই তীব্র আবেগ কাজ করে মাস্কের। তিনি সব সময় কিছু সন্তানকে তাঁর চারপাশে রাখতে পছন্দ করেন। তিনি সব সময় একজন সঙ্গী রাখতে পছন্দ করেন, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, তিনি প্রশান্তি পছন্দ করেন।’

শুল্কযুদ্ধে ট্রাম্পকে ধরাশায়ী করতে সির হাতে যত কৌশল

বাণিজ্যযুদ্ধে ট্রাম্পের আমেরিকাকে ঠেকাতে দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ে তৈরি চীন

বড় হুংকার ছেড়ে হঠাৎ চুপসে গেলেন ট্রাম্প, পিছু হটলেন শুল্কযুদ্ধে

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত: নেপথ্যে শত বছর আগের ‘গোপন চুক্তি’, নাকি অভ্যন্তরীণ রাজনীতি

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক: তিন শিবিরে বিভক্ত দেশগুলো কে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে

ফিলিস্তিন নিয়ে আরব বিশ্বের নীরবতা বিশ্বাসঘাতকতা, নাকি দুর্বলতা

শুল্কযুদ্ধে কার ক্ষতি বেশি—চীন নাকি যুক্তরাষ্ট্রের

অলিগার্কদের রাষ্ট্র লুণ্ঠনের আখ্যান: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ ও অন্যান্য

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আরাকান আর্মির আপত্তি ও শর্ত

চীন ও আরাকান আর্মির অম্ল-মধুর সম্পর্ক, কার নিয়ন্ত্রণে রাখাইন রাজ্য