কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে শুল্ক নীতি বাস্তবায়নের জন্য নির্বাহী আদেশ জারি করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ইতিমধ্যেই তিনি কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ ও চীনের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
শুল্ক কী, ট্রাম্প কেন শুল্ক আরোপ করছেন?
আমদানিকৃত বা বিদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত করকে শুল্ক বলে। যে কোনো দেশের প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করলে এই শুল্ক দিতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোনো মার্কিন কোম্পানি যদি মেক্সিকো থেকে যন্ত্রাংশ আমদানি করে, তাহলে সেই পণ্যের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় শুল্ক দিতে হবে।
শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের পেছনে তিনটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প। ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘প্রথমত, আমাদের দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ অবৈধভাবে প্রবেশ করছে। দ্বিতীয়ত, ফেন্টানাইলের মতো বিপজ্জনক মাদক আমাদের দেশে আসছে। তৃতীয়ত, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যগুলোর ওপর মার্কিন সরকার যে ভর্তুকি দেয়, তা বন্ধ করা প্রয়োজন।’
ট্রাম্পের শুল্ক কি বিশ্বে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করবে
আপনি কাকে প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করবেন, তাঁর ওপর নির্ভর করছে এই প্রশ্নের উত্তর। ২০২৪ সালে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার সময় তাঁর উপদেষ্টা ব্রায়ান লানজা বিবিসির ৪-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি কোনো বাণিজ্য যুদ্ধ নয়। এটি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে দরকষাকষির পরোক্ষ হুমকি।’
তবে কিছু বিশ্লেষকের আশঙ্কা, ট্রাম্পের এ পদক্ষেপ বিশ্বে বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা করতে পারে। কারণ, যেসব দেশের রপ্তানিকারকেরা শুল্কের মুখোমুখি হবেন, তাঁরা মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে পারেন।
যেমন— প্রথমবার ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প চীনের ওপর শুল্ক আরোপ করলে পাল্টা মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বসিয়েছিল বেইজিং। এর মধ্যে সয়াবিন ও ভুট্টার মতো কৃষিপণ্যও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলে মার্কিন কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন। কারণ যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। পরবর্তীতে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই ট্রাম্প এই কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দিতে বাধ্য হন।
কিন্তু শুল্কের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ভোক্তারা। কারণ, অতিরিক্ত শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়বে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদেরই বহন করতে হবে।
চাইলেই শুল্কনীতি বাস্তবায়ন করতে পারেন ট্রাম্প?
প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে রিপাবলিকান পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় কংগ্রেসে আইন পাস করা ট্রাম্পের জন্য তুলনামূলক সহজ। তাছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা, মার্কিন শিল্প রক্ষা বা ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ সংক্রান্ত বিষয়ে ট্রাম্প কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই শুল্ক আরোপ করতে পারেন। এসব কারণে আদালতে শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করা কঠিন।
ট্রাম্পের যুক্তি হলো- বাড়তি শুল্ক আরোপে বিদেশে বিনিয়োগ করা মার্কিন কোম্পানিগুলো তাঁদের উৎপাদন দেশে ফিরিয়ে আনতে উদ্বুদ্ধ হবে। নি বলেছেন, ‘আপনাদের যা করতে হবে তা হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা তৈরি করা। তাহলে আপনাদের শুল্ক দিতে হবে না।’
তবে জটিল বৈশ্বিক উৎপাদন ব্যবস্থার মধ্যে অনেক কোম্পানির পক্ষেই এই পদক্ষেপ নেওয়া প্রায় অসম্ভব। একটি কারখানা চালু করতে কয়েক বছর সময় লাগে, তাই কোনো কোম্পানি যদি শুল্ক এড়াতে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েও থাকে, ট্রাম্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।