আজকের পত্রিকা ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) ও অর্থনৈতিক জোট গ্রুপ-৭ (জি-৭)-এর শীর্ষ সম্মেলন সদ্য শেষ হয়েছে। গত ২৬ থেকে ২৮ জুন জার্মানির বায়ার্নের একটি প্রাচীন দুর্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে জি-৭-এর ৪৮তম সম্মেলন। আর ২৯ থেকে ৩০ জুন স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে হয়েছে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ন্যাটোর ৩২তম সম্মেলন।
এমন একসময়ে পশ্চিমাদের নেতৃত্বাধীন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন দুটির শীর্ষ সম্মেলন হলো, যখন ইউরোপের বুকে একটি ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে, যা কারও কারও মতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়ংকর। এই যুদ্ধ করোনা বিধ্বস্ত বিশ্বের জ্বালানি ও খাদ্যসংকট, মূল্যস্ফীতি ব্যাপকতর করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার বাড়ানোর মাশুল দিচ্ছে ডলার মোড়ানো বিশ্ব। চীনের ‘শূন্য করোনা নীতির’ কারণে খাবি খাচ্ছে বিশ্ব সরবরাহব্যবস্থা।
নজিরবিহীন সংকটের আবর্তে ঢুকে পড়া বিশ্বকে জি-৭ ও ন্যাটো তথা পশ্চিমা নেতৃত্ব তেমন আশার বাণী শোনাতে পারেনি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক গণমাধ্যম দ্য কনভারসেশনের এক বিশ্লেষণে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিভাগের অধ্যাপক স্টেফান উলফ লেখেন, জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারি, যুদ্ধ, খাদ্যসংকটের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি জি-৭ ও ন্যাটোর নেতৃত্ব। উলটো, সংগঠন দুটির ঘোষণা থেকে বিভক্ত বিশ্বের চিত্র আরও স্পষ্ট হয়েছে।
ন্যাটোর নতুন ‘কৌশলগত ধারণায়’ রাশিয়াকে নিজেদের মিত্রদের জন্য সবচেয়ে বড় ও প্রত্যক্ষ হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটার ফল সুদূরপ্রসারী হতে পারে। কারণ, রাশিয়াকে বাদ দিয়ে ইউরোপের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করা আত্মঘাতমূলক। তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া না হলে হিটলারকে তো থামানোও যেত না।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতির অধ্যাপক জন মেয়ারশাইমারও অনেকটা তাই মনে করেন। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক আলোচনায় তিনি বলেন, রাশিয়াকে ছাড়া চীনকে মোকাবিলা করা যাবে না। তাই রাশিয়াকে কৌশলগত মিত্র হিসেবেই দেখতে হবে।
ন্যাটোর নতুন ঘোষণায় চীনকে প্রথমবারের মতো ‘ভয়ংকর প্রতিদ্বন্দ্বী’ ঘোষণা করা হয়েছে। স্টেফান উলফের শঙ্কা, এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে ‘একটি ছায়া ন্যাটো’ তৈরি করা হতে পারে। ফলে আরও যুদ্ধংদেহী হবে বিশ্ব।