হোম > বিশ্লেষণ

ত্রিপুরা: ভারতের ঘুমন্ত রাজ্যটি হঠাৎ মুসলিম-বিদ্বেষের আঁতুড়ঘর

অনলাইন ডেস্ক

ত্রিপুরার কদমতলা বাজারে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে স্থানীয় সুহেল খানের দোকান। ছবি: আল-জাজিরা

ত্রিপুরা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি রাজ্য। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, অতীতে এই রাজ্যে কোনো ধর্মীয় সংঘাতের নজির ছিল না। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বদলে যেতে শুরু করে এই পরিস্থিতি।

আল-জাজিরার একটি প্রতিবেদনে রাজ্যটিতে সাম্প্রতিক একটি ধর্মীয় সংঘাতের কথা বলা হয়েছে। গত ৬ অক্টোবর রাতে এই রাজ্যের কদমতলা বাজারে দাঙ্গা শুরু হয়েছিল। ৩৬ বছর বয়সী আলফেশানি আহমেদ সেখানেই একটি ইলেকট্রনিক দোকানের মালিক। পরিস্থিতি অনুকূল না দেখে দোকান বন্ধ করে তিনি সেদিন দ্রুত বাড়ি ফিরছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যেই গুলিতে তার মৃত্যু ঘটে।

জানা যায়, ৬ অক্টোবর দিনের শুরুতে স্থানীয় একটি ক্লাবকে দুর্গাপূজার চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোকে কেন্দ্র করে এক মুসলিম গাড়ি চালক ও তাঁর সহযাত্রীকে হেনস্তা করা হয়। বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ফলস্বরূপ, বিকেলে স্থানীয় হিন্দু ও মুসলিম গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠিচার্জ ও গুলি চালায়।

ত্রিপুরার উত্তরাঞ্চলের মুসলিম ও হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোতে ঐতিহ্যগতভাবে দুর্গাপূজার চাঁদা দিয়ে সম্প্রীতির সম্পর্ক বজায় রাখা হতো। তবে সাম্প্রতিক ঘটনার পর সেই সম্পর্ক টালমাটাল হয়ে উঠেছে।

ঘটনার পর রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠী অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার দাবি করেছিল। পুলিশ দুজনকে আটকও করে। কিন্তু পূজার এক সদস্য ফেসবুকে মুসলিম ধর্মীয় নবী মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। তাঁর এই পোস্ট ক্ষোভ আরও উসকে দেয়।

সংঘাতে হিন্দু ও মুসলিম গোষ্ঠীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি আক্রমণের ঘটনা ঘটে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো মুসলিমদের দোকানপাট পুড়িয়ে দেয়। পুড়ে যায় কদমতলা বাজারের একটি মসজিদও। স্থানীয় মুসলিম বাসিন্দাদের ঘরবাড়িও পোড়ানো হয়।

৪০ বছর বয়সী ইসলাম উদ্দিন জানান, তাঁর বাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হয় সেদিন। জীবন বাঁচাতে পুরো পরিবারকেই পালাতে হয়েছে। স্থানীয় মুসলিম দোকানদার সুহেল আহমেদের দোকান সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই দাবি করেছেন, হিন্দুরা যখন সহিংসতা চালাচ্ছিল, তখন পুলিশ কোনো হস্তক্ষেপ করেনি।

স্থানীয় বিধায়ক ইসলাম উদ্দিন পুলিশের নির্লিপ্ত ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বলেন, ‘পুলিশ চাইলে এই সহিংসতা থামাতে পারত। কিন্তু তারা পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে।’

ত্রিপুরা ঐতিহাসিকভাবে ধর্মীয় সহিংসতার জন্য পরিচিত ছিল না। তবে ২০১৮ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। স্থানীয় মুসলিম ব্যবসায়ীদের ওপর আক্রমণ থেকে শুরু করে রাজ্যটিতে মসজিদ দখল চেষ্টার মতো ঘটনাও বেড়েছে।

ত্রিপুরার সম্প্রীতিতে ক্ষমতাসীন দলের ভূমিকা অস্বীকার করেছেন বিজেপির মুখপাত্র সুব্রত চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার উন্নয়নমূলক কাজের ওপর জোর দিচ্ছে।’

কদমতলা বাজারে মুসলিম গ্রাহকেরা এখন হিন্দু দোকানে কেনাকাটা করতে অনিচ্ছুক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বহু বছর লেগে যাবে বলে মনে করেন ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিরা।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হক বলছেন, ‘আগে হিন্দুরা মুসলিমদের কথা ভেবে উৎসবে শব্দ কমানোর চেষ্টা করত। এখন তারা উসকানিমূলক গান বাজায়।’

ত্রিপুরায় হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির সম্পর্ক বর্তমানে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মেরুকরণ এই উত্তেজনাকে আরও উসকে দিচ্ছে।

হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ পাকিস্তান, সম্পর্কের রসদ ভারতবিরোধিতা

বাংলাদেশ ও পাকিস্তান নিয়ে মার্কিন ‘দুমুখো নীতি’ শোধরাবেন কি ট্রাম্প

দিনে শান্তির কথা রাতে গাজায় হামলা, ইসরায়েল কি আদৌ যুদ্ধবিরতি চায়

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েন: সংকটে রোগী আর শিক্ষার্থীরা

বুলডোজার যেভাবে মোদির ভারতের প্রতীক হয়ে উঠল

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক কি তবে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে মোড় নেবে

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে হঠাৎ কেন এত খাতির করছে ভারত

ট্রুডোর প্রতি কানাডীয়দের ভালোবাসা কীভাবে ফুরিয়ে গেল

ট্রাম্প কি সত্যিই গ্রিনল্যান্ড কিনতে চান, কিন্তু কেন

ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম থেকে ফ্যাক্ট-চেকিং সরিয়ে জাকারবার্গ কি ট্রাম্পের বশ্যতা স্বীকার করলেন

সেকশন