হোম > বিশ্লেষণ

ট্রুডোর প্রতি কানাডীয়দের ভালোবাসা কীভাবে ফুরিয়ে গেল

অনলাইন ডেস্ক

আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২২: ০৩
ছবি: দ্য টাইমস

বহু বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কারিনা স্মিথের নজর পড়েছিল এক সহপাঠীর ওপর। শান্ত স্বভাবের কিন্তু অত্যন্ত সুদর্শন সেই তরুণের নাম জাস্টিন ট্রুডো। কারিনা সাহস করে তাঁকে প্রেমের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন!

বর্তমানে ৪২ বছর বয়সী কারিনা জানান, সুদর্শন সেই ট্রুডো তাঁকে খুব নম্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবে এই প্রত্যাখ্যান তাঁকে খুব কষ্ট দিয়েছিল।

তারপরও ট্রুডোর জীবনযাত্রা মুগ্ধ চিত্তে অনুসরণ করতেন কারিনা। একজন পোস্টগ্র্যাজুয়েট ছাত্র থেকে ট্রুডোর ধীরে ধীরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী হওয়া কিংবা ভোগ ম্যাগাজিনের বিচারে বছরের সবচেয়ে আবেদনময় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হওয়া—এই সবকিছুই দারুণ উপভোগ করতেন প্রেমে ব্যর্থ কারিনা।

দুই দশক পর সেই কারিনা স্মিথসহ অনেক কানাডীয়ই ট্রুডোর প্রতি ভালোবাসা হারিয়েছেন। তিন সন্তানের মা কারিনা এখন বলেন, ‘আমাদের নতুন শুরু প্রয়োজন।’

গত সপ্তাহে ট্রুডোর পদত্যাগের ঘোষণাটি অপ্রত্যাশিত ছিল না। তিনবারের ভোটাভুটিতে মামুলি জয়, লিবারেল পার্টির ভেতরে ক্রমবর্ধমান চাপ এবং ইতিহাসে সর্বনিম্ন জনপ্রিয়তার হার—সবকিছুই এই সিদ্ধান্তের পেছনে ছিল।

২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসা ট্রুডো সেই সময়ে কানাডীয়দের কাছে এক নতুন স্বপ্নের প্রতীক ছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই জনপ্রিয়তা ম্লান হতে থাকে। জীবনযাত্রার উচ্চ খরচ, বাড়ি ও খাবারের মূল্যবৃদ্ধি, অপরাধের হার বৃদ্ধি এবং মানুষের জীবনযাত্রার মানে অবনতি—এ সবকিছুতেই তাঁর প্রশাসন ব্যর্থতার দায়ভার বহন করেছে।

ট্রুডোর প্রতি কানাডীয়দের ভালোবাসা ফুরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তাঁর সাবেক নীতিনির্ধারণ পরিচালক মার্সি সার্কেস বলেন, ‘একবার মানুষ কারও বিরুদ্ধে যেতে শুরু করলে তারা পুরোপুরি মুখ ফিরিয়ে নেন।’

কানাডার মন্ট্রিয়লের প্যাপিনো জেলার বাসিন্দা নিক প্যানিয়েসাসের কথাই ধরা যাক। একটি সুভলাকি রেস্তোরাঁ চালান তিনি। নিক বলেন, ‘জীবনযাত্রার খরচ আজকাল খুবই বেশি।’ তাঁর এই মন্তব্য যেন কানাডার সব মানুষের হতাশাকেই প্রতিনিধিত্ব করছে। তিনি জানান, রোমেইন লেটুসের একটি বাক্সের দাম একসময় ২০ ডলার ছিল, যা এখন কোনো কোনো দিন ৭০ ডলারে পৌঁছে যায়।

নিক বলেন, ‘কার্বন ট্যাক্স আমাদের মেরে ফেলছে।’ তাঁর মতে, ছোট ব্যবসাগুলোর জন্য এই ট্যাক্স বাড়তি চাপ তৈরি করেছে।

নিক যে এলাকায় বাস করেন, সেই প্যাপিনোর বহু মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছেন। এই পরিস্থিতির জন্য ওই এলাকায় ট্রুডোর লিবারেল পার্টির ভিত্তি দ্রুত দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে ট্রুডোর বিপরীতে কনজারভেটিভ নেতা পিয়ের পোলিভারের ‘ট্যাক্স বাতিল করার’ প্রতিশ্রুতি এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের পরিকল্পনা অনেক ভোটারের কাছেই আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। যদিও পোলিভারকে অনেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের লাইট ভার্সন হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে জাতিকে বিভক্ত করার অভিযোগও রয়েছে।

কানাডায় ট্রুডোর সময়কাল সংস্কৃতিগতভাবে উদার নীতির জন্য বিখ্যাত ছিল। তবে ড্রাগ ব্যবহার বৈধকরণ, স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমোদন এবং জাতিসংঘে আদিবাসীদের প্রতি কানাডার আচরণের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনার মতো বিষয়গুলো তাঁর বিরুদ্ধে বিভাজন সৃষ্টির অভিযোগ এনে সমালোচিত হয়েছে।

ট্রুডোর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। সাশ্রয়ী শিশুযত্ন প্রকল্প এবং জি৭-এ সর্বনিম্ন বাজেট ঘাটতি তাঁর প্রধান সাফল্য হিসেবে গণ্য হলেও তাঁর ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার ইচ্ছাকে কেন্দ্র করে তাঁর সময়কালকে মূল্যায়ন করা হবে বলে মনে করেন অনেকে।

কানাডার ভবিষ্যৎ এখন নতুন নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করছে। ট্রুডোর উত্তরসূরি নির্বাচন এবং কনজারভেটিভদের সম্ভাব্য জয় আগামী দিনগুলোতে দেশটির রাজনৈতিক দৃশ্যপটে একটি বড় পরিবর্তন আনবে বলে মনে হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

ট্রাম্প কি সত্যিই গ্রিনল্যান্ড কিনতে চান, কিন্তু কেন

ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম থেকে ফ্যাক্ট-চেকিং সরিয়ে জাকারবার্গ কি ট্রাম্পের বশ্যতা স্বীকার করলেন

জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগ: কানাডার অভিবাসন নীতি ও ভারত-কানাডা সম্পর্কের ভবিষ্যৎ