‘আব্বুর পছন্দ হালকা ঘ্রাণের আতর আর ইরানি বর্ডার টুপি। এ দুটো কেনা হলেই আমার ঈদ শপিং শেষ। এরপর আজ রাতেই ঢাকা ছাড়ব।’ বলছিলেন রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় আতর-টুপি কিনতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী মুমতাহিনা তামান্না। তিনি বলেন, নিজের জন্য কিছুই কেনেননি এবার। তবে টিউশনি করে জমানো টাকায় জীবনে প্রথমবারের মতো মা-বাবা ও ছোট ভাইয়ের জন্য ঈদের পোশাক কিনেছেন। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কেনা বাকি ছিল। ছুটির দিনে ভিড়মুক্ত ঢাকায় সেই কেনাকাটাই শেষ করছেন। এদিন মায়ের শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে খোঁপার ব্যান্ড, বাবার জন্য আতর-টুপি আর ভাইয়ের শার্টের সঙ্গে মিলিয়ে একটা হ্যাট কিনেছেন তিনি।
মুমতাহিনা তামান্নার মতো বেশির ভাগ ক্রেতাই রমজানের শেষ পর্যায়ে এসে টুকিটাকি কেনাকাটা করছেন। কেউ কেউ আবার ভিড়মুক্ত দোকান পেতে শেষ সময়ে শুরু করছেন কেনাকাটা।
বেইলি রোডের বিপণিবিতান নাভানা বেইলিতে পরিবার নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা তানভির রহমান বলেন, ‘ঈদ ঢাকাতেই করব। তাই ভিড়ের মধ্যে এত দিন বের হইনি। রাস্তা, দোকানপাট সবই এখন ফাঁকা। আস্তে-ধীরে কেনাকাটা করতে পারছি।’
বিক্রেতারা জানান, রমজানের শেষ পাঁচ দিনে পোশাক বিক্রি কমে আসে। ঢাকায় যাঁরা ঈদ করবেন, তাঁরা কেনাকাটা করতে আসেন। তবে সেই সংখ্যাটা একেবারেই কম। ঈদের শেষ তিন-চার দিনে মূলত ছেলেদের আতর, টুপি এবং মেয়েদের মেহেদি, লিপস্টিক, নেইলপলিশের মতো প্রসাধনী বেশি বিক্রি হয়। তবে এবার বিপণিগুলোতে শেষ দিকে এসেও প্রসাধনীর বিক্রি কম বলে দাবি করেন বিক্রেতারা।
নাভানা বেইলির প্রসাধনীর দোকান স্টার ওয়ার্ল্ডের ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, ‘এবার আমাদের বিক্রি মোটামুটি। শেষ দিকে এসে লিপস্টিক, নেইলপলিশ, শ্যাডো এসব বিক্রি হচ্ছে।’
একই বিপণিবিতানের প্রসাধনীর দোকান স্কাইলার্কের দোকানি মোহাম্মদ সাইজুদ্দিন বলেন, ‘১৫ বছরের পুরোনো দোকান আমার। ঈদবাজারের এই অবস্থা আগে দেখিনি। মনে হচ্ছে এর চেয়ে অন্য সময়ের বেচাকেনা ভালো।’
বিপণিবিতানের বিক্রেতাদের মতো ফুটপাতগুলোতেও রমজানের শেষ পর্যায়ে এসে বিক্রি কমেছে বলে জানান হকাররা। মৌচাক মার্কেট এলাকায় গয়না ও প্রসাধনীর হকার শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘মানুষ আমাদের কাছ থিকা আসা-যাওয়ার পথে বেশি কেনে। এখন মানুষ তো প্রায় সব বাড়ির পথে। রাস্তায় লোক কম। তাই আমগো বেচাকিনাও এহন কম। শুরুর দিকে আরও বেশি ছিল। তারপরও যা হইতেছে খারাপ না।’