নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
শেষ বিদায়ে ছেলের মুখ দেখে মা রাইসা সুলতানা কান্নায় ভেঙে পড়েন। হাত দিয়ে বারবার ছেলে মুখ নাড়তে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘বাবা তুমি শান্তিতে ঘুমাও আবার দেখা হবে।’ গতকাল বৃহস্পতিবার পূর্বাচলে পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেলে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় নিহত হন বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদ।
আজ শুক্রবার বিকেলে তাঁর লাশ গ্রীন রোডের বাসায় আনা হয়। এ বাসাতেই ছোট বোন ও মা–বাবার সঙ্গে থাকতেন মুহতাসিম।
স্বজনেরা বলছেন, অন্যান্য দিনের মতোই গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুহতাসিম মোটরসাইকেল নিয়ে বুয়েটের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে মায়ের সঙ্গে শেষবার ফোনে কথা বলেন। কিন্তু ভোরে একটি ফোন কল তাঁদের জীবনের চিরচেনা ছন্দে আঘাত হানে।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মুহতাসিমের মা-বাবা দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মুহতাসিমের লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রীন রোডের বাসায় আনা হয়। সেখানে আগেই জড়ো হয়েছিলেন আত্মীয়স্বজন ও মুহতাসিমের সহপাঠীরা।
অ্যাম্বুলেন্সের সামনে এসে ছেলের মুখ থেকে কাপড় সরানোর সঙ্গে সঙ্গে মা রাইসা সুলতানা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছেলের প্রতি শেষবারের মতো বিদায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাবা তুমি শান্তিতে ঘুমাও। আবার আমাদের দেখা হবে।’ পরে পরিবার, বন্ধু ও স্বজনদের অশ্রুসিক্ত চোখে মুহতাসিমের লাশ দাফনের জন্য মিরপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।
দুর্ঘটনায় একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান মুহতাসিম মাসুদের বাবা মাসুদ মিয়াও। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে চাকরি করেন। অ্যাম্বুলেন্সে ছেলের লাশের পাশে বসে মাসুদ মিয়া বলেন, পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে ছেলের মোটরসাইকেল থামিয়ে কাগজপত্র চাওয়া হয়।
মোটরসাইকেল থেকে নেমে মুহতাসিম কাগজপত্র বের করছিল। ঠিক তখনই মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে এসে তাঁর ছেলেকে চাপা দেয়। মাসুদ মিয়া বলেন, ‘সাবেক সেনা কর্মকর্তার ছেলে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমি ছেলে হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
নারায়ণগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন এ এফ এম মুশিউর রহমান আজ শুক্রবার রাতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদ নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার তিনজনকে ডোপ টেস্ট করানো হয়েছে। এর মধ্যে দুজনের ডোপ টেস্টের রেজাল্ট পজেটিভ এসেছে। তাঁরা হলেন মুবিন আল মামুন ও মিরাজুল করিম।’ তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার তিন আসামিকে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে ডোপ টেস্ট করানো হয়।