মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আগামীকাল সোমবার। ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক কেশব রায় চৌধুরী রায় ঘোষণা করবেন।
আগামী ১৫ নভেম্বর রায়ের তারিখ ধার্য করেছেন। গত ২৬ অক্টোবর রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য ছিল। ওই দিন রায় ঘোষণা না করে বিচারক ১৫ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।
১৯ বছর আগে তিন্নি হত্যাকাণ্ডের একমাত্র আসামি সাবেক ছাত্রনেতা ও বরিশাল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভি। অভি পলাতক রয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ চলছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর রাতে খুন হন তিন্নি। পরের দিন সকালে তিন্নির লাশ পাওয়া যায় বুড়িগঙ্গা এক নম্বর চীন মৈত্রী সেতুর নিচে পিলারের ওপরে ঝুলন্ত অবস্থায়। এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ থানার সহকারী উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) মো. শফি উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামা আসামির নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা তদন্ত করেন। তদন্ত করতে গিয়ে জানা যায়, তিন্নি হত্যাকাণ্ডের আগে ২০০২ সালের ৬ নভেম্বরে তাঁর স্বামী সাক্কাত হোসেন পিয়ালের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য করেন অভি। তিন্নিও তাকে তালাক দেন। ওই দিনই পিয়ালকে তাঁর দেড় বছর বয়সী কন্যাসন্তানসহ রাজধানীর বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর বিয়ে করার জন্য অভিকে চাপ দিতে থাকেন তিন্নি। কিন্তু অভি বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। একপর্যায়ে তিন্নি বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেন। পরে ১০ নভেম্বর রাতে মাথায় আঘাত করে তিন্নিকে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ গুমের উদ্দেশ্যে ওই রাতে বুড়িগঙ্গার ১ নম্বর চীন মৈত্রী সেতুর ওপর থেকে নদীতে ফেলে দেওয়া হয় লাশ। কিন্তু পানিতে নয়, লাশটি পড়ে পিলারের উঁচু অংশে। পরদিন সকালে লাশ ঘিরে জমে উৎসুক জনতার ভিড়।
কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহালের পর ময়নাতদন্ত করে। মর্গে চার দিন রাখার পর ১৫ নভেম্বর অজ্ঞাত হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয় তিন্নিকে।
এদিকে তিন্নি চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হারানো ডায়েরি করেন। করে তিন্নির পরিবারের লোকজন ছবি দেখে লাশ শনাক্ত করেন।
মামলাটি চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে ২০০২ সালের ২৪ নভেম্বর তদন্তভার সিআইডিতে ন্যস্ত হয়। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের এএসপি মোজাম্মেল হক আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে ৪১ জনকে সাক্ষী করা হয়। এছাড়াও এই মামলায় ২২টি আলামত জব্দ করা হয়। ২০১০ সালের ১৪ জুলাই ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তিন্নি হত্যা মামলায় আসামি অভির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
গোলাম ফারুক অভির উত্থান ঘটে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে। ছাত্র হিসেবে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। এসএসসি এবং এইচএসসিতে বোর্ড পর্যায়ে মেধার স্বাক্ষর রাখেন। নব্বইয়ের গণ-আন্দোলন ঠেকাতে এরশাদের নজর পান অভি। ওই সময় অপহরণ ও মুক্তিপণ এবং চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তিনি নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে তিনি গ্রেপ্তার হন। তবে নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের চরম পর্যায়ে ডিসেম্বরের প্রথম দিকে কারাগার থেকে মুক্তি পান। আর ছাড়া পেয়েই পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন।
তিন্নি হত্যাকাণ্ডের পর অভি কানাডায় পালিয়ে যান। কানাডার টরোন্টো থেকে অভি পাওয়ার অব অ্যাটর্নির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠিয়ে এক আইনজীবীর মাধ্যমে মামলাটির স্থগিতাদেশ চেয়ে ২০১০ সালের ৫ই ডিসেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। যার রিট পিটিশন নম্বর ৯৫৩১ / ২০১০। বাংলাদেশে নিম্ন আদালতে চলমান মামলাটিতে অংশ নেওয়ার জন্য (ওই দেশে অবস্থিত) বাংলাদেশ দূতাবাসে পাসপোর্ট চেয়ে পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি। ইচ্ছে থাকলেও দেশে আসতে পারছে না বলেও উল্লেখ করেন। তাই তার ন্যায়বিচার পাওয়ার স্বার্থে পাসপোর্ট পেয়ে দেশে আসা পর্যন্ত মামলাটির কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ চাওয়া হয় অভির পক্ষে। শুনানি শেষে একই বছরের ১৫ই জানুয়ারি রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এরপর ২০১১ সালের ২৩শে জুন হাইকোর্ট মামলাটির স্থগিতাদেশ দেন। এই কারণে প্রায় সাত বছর মামলার কার্যক্রম স্থগিত ছিল। পরে হাইকোর্টের আদেশে মামলার কার্যক্রম আবার চালু হয়।