পূর্বাচলে পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় বুয়েটের শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদ নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার প্রাইভেট কারের চালকসহ দুজনের শরীরে অ্যালকোহলের উপস্থিতি মিলেছে। আজ শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে গ্রেপ্তার তিনজনের ডোপ টেস্ট করা হয়।
নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন এ এফ এম মুশিউর রহমান আজ শুক্রবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদ নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার তিনজনকে ডোপ টেস্ট করানো হয়েছে। এর মধ্যে দুজনের ডোপ টেস্টের রেজাল্ট পজেটিভ এসেছে। তাঁরা হলেন মুবিন আল মামুন ও মিরাজুল করিম। তাঁদের শরীরে অ্যালকোহলের উপস্থিতি মিলেছে।’
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সংকেত পাওয়ার পর পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন মোটরসাইকেল আরোহী তিন বন্ধু। তাঁরা বুয়েটের শিক্ষার্থী। পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন তাঁরা। ঠিক এমন সময় পেছন থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা একটি প্রাইভেট কার ধাক্কা দেয় তাঁদের। ঝড়ের গতিতে ছিটকে পড়েন তিনজন। ঘটনাস্থলেই মারা যান মুহতাসিম মাসুদ। গুরুতর আহত হন মেহেদী হাসান ও অমিত সাহা। রাত ৩টার দিকে পূর্বাচল ৩০০ ফুট নীলা মার্কেট (কুড়িল-কাঞ্চন সড়ক) এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় প্রাইভেট কারের চালক মুবিন আল মামুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মুবিন আল মামুন (২০) রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস এলাকার বাসিন্দা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুনের ছেলে।
গ্রেপ্তার অন্য দুজন হলেন ওই গাড়িতে থাকা মিরপুর এলাকার রিজওয়ানুল করিমের ছেলে মিরাজুল করিম (২২) এবং উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের বাহাউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে আসিফ চৌধুরী।
পুলিশ আরও জানায়, ওই প্রাইভেট কার থেকে একটি মদের খালি বোতল ও এক ক্যান বিয়ার পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁরা মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন।
এ ঘটনায় নিহত মুহতাসিমের বাবা বাদী হয়ে সড়ক পরিবহন আইনে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম বলেন, তাঁদের ডোপ টেস্টের পর আজ শুক্রবার আদালতে পাঠানো হয়েছে। নিহত মুহতাসিমের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার জব্দ করেছে পুলিশ।
জানা যায়, নিহত মুহতাসিম মাসুদ রাজধানীর কলাবাগান থানার গ্রিন রোড এলাকার বাসিন্দা মাসুদ মিয়ার ছেলে। আর আহত মেহেদী কুমিল্লা সদর উপজেলার মফিজুর রহমান খানের ছেলে এবং অমিত ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা পৌরসভার তপন কুমার সাহার ছেলে। মেহেদী রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে এবং অমিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মামলার এজাহারে জানা যায়, গতকাল রাত ৮টার দিকে মুহতাসিম তাঁর মোটরসাইকেলে করে দুই বন্ধুকে নিয়ে ৩০০ ফিট নীলা মার্কেট এলাকায় খাওয়াদাওয়া করার জন্য আসেন। তাঁরা খাওয়াদাওয়া শেষ করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে নীলা মার্কেট মোড়ে পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে তাঁদের মোটরসাইকেল থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। এ সময় বেপরোয়া গতিতে আসা একটি প্রাইভেট কার তল্লাশিচৌকিতে দাঁড়ানো মোটরসাইকেলে থাকা তিনজনকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মুহতাসিম মাসুদ মারা যান। আহত হন তাঁর দুই সহপাঠী।
এদিকে ওই ঘটনার খবর পেয়ে ভোরে রূপগঞ্জ থানায় আসেন বুয়েটের শতাধিক শিক্ষার্থী। থানার বাইরে তাঁরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে মামলা গ্রহণ ও আটক ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। সেখানে থেকেই দুপুরে বিক্ষোভের ডাক দেন শিক্ষার্থীরা।
পরে ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার পলাশীর মোড়ে অবস্থান নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তাঁরা। সেখানে সহপাঠী নিহতের ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ, নিহতের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং সড়ক আইন জারিসহ ছয় দফা দাবি জানান বুয়েট শিক্ষার্থীরা।