সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের আরও বেশ কিছু এলাকায় ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করা হচ্ছে। আজকের পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
বরিশাল: বরিশাল নগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আগাম ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করছে। জেলার অর্ধশত মসজিদে আজ বুধবার সকালে ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়।
বরিশাল নগরীর সাগরদী তাজকাঠী মিয়াবাড়ী এলাকায় এলাকার জাহাগিরিয়া শাহ্সুফি মমতাজিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়ার ইমামতিতে অনুষ্ঠিত নামাজে কয়েকশ মুসল্লি অংশ নেন। আগাম ঈদ পালনকারীরা চট্টগ্রামের চন্দনাইশের জাহাগিরিয়া শাহ্সুফি মমতাজিয়া দরবার শরিফের অনুসারী।
বরিশাল নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হরিনাফুলিয়ার চৌধুরীবাড়ি শাহ্সুফি মমতাজিয়া জামে মসজিদের সভাপতি মমিন উদ্দিন কালু বলেন, ‘আমাদের ওয়ার্ডে আগাম ঈদ পালন করছে প্রায় এক হাজার পরিবার।’
নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তাজকাঠীর হাজি বাড়ির জাহাগিরিয়া শাহ্সুফি মমতাজিয়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি আমীর হোসেন বলেন, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ সাগরদী, তাজকাঠীসহ আশপাশের প্রায় ৫০০ পরিবার সোমবার ঈদ পালন করছে। একইভাবে নগরীসহ জেলার প্রায় অর্ধশত মসজিদে চন্দনাইশ দরবারের অনুসারীরা ঈদের নামাজ পড়েছে।
এ ছাড়া জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার খানপুরা, কেদারপুর, মাধবপাশাসহ পাঁচ-ছয়টি গ্রামের ১ হাজারের বেশি পরিবারে আগাম ঈদ উদ্যাপন হচ্ছে। জেলার মুলাদি, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় এবং সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন, পতাং, লাহারহাট গ্রামের জাহাগিরিয়া সুফি দরবারের প্রায় দুই হাজার অনুসারী রয়েছেন।
আজ সকাল ৯টায় বসন্তবাগ গ্রামের মুন্সিবাড়ি জামে মসজিদ, ফাজিলপুর গ্রামের পাটোয়ারি বাড়ি মসজিদ, নোয়াখালী পৌরসভার লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের দায়রা বাড়ি কাছারি ঘর ও হরিনারায়ণপুর দায়রা শরীফ জামে মসজিদে ঈদুল ফিতরের জামাত হয়। ঈদের জামাতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে সাত গ্রামের শতাধিক পরিবার আজ সকাল সাড়ে ৯টায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। উপজেলার মুন্সিপাড়ায় এই ঈদের জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা আব্দুল মাজেদ।
স্থানীয়রা জানায়, কালীগঞ্জের তুষভান্ডার, সুন্দ্রহবী, কাকিনা, চাপারহাট, চন্দ্রপুর, আমিনগঞ্জ ও মুন্সীপাড়া গ্রামের শতাধিক পরিবারের মুসল্লিরা ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন।
হাড়িশহরের মুন্সিপাড়ার ঈদগাহ মাঠের সভাপতি আব্দুল ছাত্তার বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে কয়েক বছর ধরে এই এলাকার মানুষ ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, শবে কদর, শবে মেরাজসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ কবির বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে অনেক আগে থেকে কাকিনা-তুষভান্ডার ইউনিয়নের সুন্দ্রাহবি, চন্দ্রপুর ইউনিয়নের বোতলা ও পানি খাওয়ার ঘাট এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় করে আসছে কিছু মানুষ। নামাজের সময় মুসল্লিদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে।
গাইবান্ধা: গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করা হয়েছে। এলাকায় একদিন আগে ঈদ উদ্যাপন করায় স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলার ‘সহিহ হাদিস সম্প্রদায়ের’ লোকজন উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্দা গ্রামের মধ্যপাড়া আহলে হাদিস নতুন জামে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন। ঈদের নামাজে ইমামতি করেন হাফেজ মশিউর রহমান।
নামাজে আসা সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রাজিবপুর গ্রামের সাইদুল বলেন, ‘সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদের নামাজ পড়তেই আজ সকালে এখানে এসেছি। সবাই মিলে ঈদুল ফিতর আদায় করলাম। এভাবে আট বছর ধরে ঈদ করে আসছি।’
পিরোজপুর: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, নাজিরপুর ও কাউখালী উপজেলার ১০ গ্রামের ৮ শতাধিক পরিবার ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করছে।
মঠবাড়িয়ার পূর্ব সাপলেজা, ভাইজোড়া, কচুবাড়িয়া, খেতাচিড়া, বাদুরতলী ও চড়কগাছিয়া গ্রামের সাত শতাধিক পরিবার; কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামের ৪০টি পরিবার; নাজিরপুর উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়নের খেজুরতলা গ্রামের ৭০টি পরিবার আজ ঈদের নামাজ আদায় করেছে। সকাল ১০টায় মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের ভাইজোড়া গ্রামের খোন্দকার বাড়িতে ঈদের জামাত হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় উপজেলার কচুবাড়িয়া গ্রামের হাজী ওয়াহেদ আলী হাওলাদার বাড়িতে ঈদের জামায়াত হয়। সকাল ৮টায় কাউখালীর শিয়ালকাঠীর মোল্লাবাড়ি জামে মসজিদে ঈদের জামায়াত হয়।
স্থানীয়রা জানায়, শরীয়তপুরের নাড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর গ্রামের মরহুম হজরত মাওলানা জান শরিফ ওরফে শাহে আহম্মদ আলীর অনুসারীরা মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের পূর্ব সাপলেজা, ভাইজোড়া, কচুবাড়িয়া, খেতাছিড়া, বাদুরতলী ও চড়কগাছিয়া গ্রামের কয়েক শ পরিবার বহু বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদ পালন করে আসছে।
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) : জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে ১৩ গ্রামের মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করেছে। আজ সকালে পৌরসভার বলারদিয়ার মাস্টারবাড়ি জামে মসজিদ মাঠ প্রাঙ্গণে ঈদুল ফিতরের জামাত হয়। বলারদিয়ার জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আজিম উদ্দিন মাস্টার ঈদের নামাজে ইমামতি করেন।
এ ব্যাপারে মাওলানা আজিম উদ্দিন মাস্টার বলেন, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে তাঁরা রোজা পালন করেন। এ কারণে তাদের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করা হলো। এভাবে প্রতি বছর তারা ঈদ আনন্দ উদ্যাপন করে থাকেন বলে জানান।
স্থানীয়রা জানায়, ১৯৮৬ সালে এ গ্রামের মাওলানা আব্দুর রশীদ বাদশা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদ পালনের প্রথা শুরু করেন। ২০২২ সালে তাঁর মৃত্যুর পর বড় ছেলে মাওলানা আব্দুল বাতেন এই প্রথা ধরে রেখেছেন।
গঙ্গাচড়া মডেল থানার ওসি মাসুমুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, উপজেলার বড়বিল ইউনিয়নের একটি গ্রামের ১২০টি পরিবার সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদের নামাজ আদায় করে। এ জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে।
খয়ের বাড়ি জামে মসজিদে মো. দেলোয়ার হোসেন কাজী এবং আয়ড়া মাদ্রাসা মাঠে হাফেজ আব্দুল কাইয়ুম নামাজে ইমামতি করেন। বিশৃঙ্খলা এড়াতে বিরামপুর থানা-পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।
বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঈদের নামাজে বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দুটি জামায়াতে ২৪০ জন মুসল্লি অংশ নেন।
পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) : গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে সহিহ হাদিস সম্প্রদায়ের মুসল্লিরা ঈদ উদ্যাপন করেছে। আজ সকালে উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্দা গ্রামের মধ্যপাড়া আহলে হাদিস নতুন জামে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন তারা।
নামাজে ইমামতি করেন হাফেজ মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে সবাই মিলে ঈদুল ফিতর আদায় করলাম। এভাবে আট বছর ধরে ঈদ করে আসছি।’
আজ সকাল ৮টায় ছিট পাইকেরছড়ায় এবং ৮টা ১৫ মিনিটে পাইকডাঙ্গায় ঈদুল ফিতরের জামাত হয়। ছিট পাইকেরছড়ার ঈদের জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা মোকছেদুল ইসলাম। পাইকডাঙ্গার ঈদের জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা আশরাফুল ইসলাম।
পাইকেরছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক সরকার বলেন, কয়েক বছর ধরে আহলে হাদিস অনুসারী ওই দুই গ্রামের মানুষ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদের নামাজ আদায় করে আসছেন।
ভূরুঙ্গামারী থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দুটি গ্রামের মসজিদে ঈদুল ফিতরের জামাত হয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।