গাজীপুরের কাশিমপুরে বেক্সিমকোর বন্ধ ১৬টি কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন কর্মকর্তা–কর্মচারী ও শ্রমিকেরা। আজ বুধবার চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করে অর্ধশতাধিক যানবাহনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন তাঁরা। পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।
পরে উত্তেজিত শ্রমিকরা তেতুইবাড়ী এলাকার শেখ ফজিলাতুন্নেছা কেপিজে হাসপাতালের সামনে সড়কের পাশে গ্রামীণ ফ্যাব্রিকসের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেন। এ কারণে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
আন্দোলনকারী শ্রমিকদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ভেতরে বন্ধ সব কারখানা খুলে দেওয়া, ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করা, এলসি খুলে দেওয়া এবং অন্যান্য বকেয়া পরিশোধ করতে হবে।
বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বেশ কয়েক দিন ধরে আন্দোলন করছেন বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিকেরা। এরই ধারাবাহিকতায় আজ বিকেলে কাশিমপুর মোজার মিল এলাকায় চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। এ সময় সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়েন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা।
খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, মহানগর পুলিশ ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু শ্রমিকেরা মহাসড়ক থেকে সরতে অস্বীকৃতি জানান। উত্তেজিত কিছু শ্রমিক সড়কের যানজটে আটকা গণপরিবহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সড়কের পাশে কয়েকটি দোকানে হামলা করেন। পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
এ সময় ছবি তুলতে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরাও শ্রমিকদের হামলার শিকার হন। হামলায় দীপ্ত টিভির গাজীপুর প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাভিশন টিভির চিত্রগ্রাহক আমির হোসেন রিয়েল ও প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার কালিয়াকৈর প্রতিবেদক আবু সাঈদ আহত হন।
পুলিশ জানায়, আন্দোলনরত শ্রমিকেরা চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় শ্রমিকেরা বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ ৪-৫টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। ১৫-২০টি যানবাহনের জানালার গ্লাস ভাঙচুর করা হয়। উত্তেজিত শ্রমিকদের লাঠি হাতে সড়কে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা যায়।
পরে সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশ সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে শ্রমিকদের দুপাশ থেকে ধাওয়া দেয়। তারা টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় তেতুইবাড়ী এলাকার শেখ ফজিলাতুন্নেছা কেপিজে হাসপাতালের সামনে সড়কের পাশে অবস্থিত গ্রামীণ ফ্যাব্রিকসের গেট ভাঙচুর করে ভেতরে ঢুকে ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় শ্রমিকেরা।
কাশিমপুর ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, গ্রামীণ ফ্যাব্রিকস অ্যান্ড ফ্যাশন কারখানায় আগুন লাগার খবর পেয়ে সারাবো ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২-এর পরিদর্শক রাজিব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেক্সিমকোর আন্দোলনকারী শ্রমিকেরা চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে আন্দোলন করার সময় একটি বাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যানসহ আশপাশের কয়েকটি দোকানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। পুলিশ তাঁদের থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।’