নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নগর ভবনে অব্যাহতিপত্র দিয়ে দায়িত্ব ছেড়েছেন তিনি। একই সঙ্গে প্যানেল মেয়র গাজী নাইমুল হোসেন লিটুকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। এ উপলক্ষে তাঁর অনুসারীরা নগরের প্রধান সড়কের প্রায় দেড় কিলোমিটারজুড়ে দাঁড়িয়ে তাঁকে বিদায় সংবর্ধনা জানান। এতে স্কুল-কলেজের শত শত শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
এ সময় নগরের ফজলুল হক অ্যাভিনিউ, কাকলীর মোড়, সদর রোড, লাইন রোড পর্যন্ত প্রধান সড়কগুলোতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়।
এদিকে সাদিকের বিদায়ের দিনই প্রায় ৮০০ কোটি টাকা একনেকে অনুমোদন হওয়ায় নগরে আনন্দ উল্লাস করেছে নবনির্বাচিত মেয়র খোকনের অনুসারীরা। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মেয়র খোকনের ব্যক্তিগত সহকারী রুবেল হাওলাদার।
সাদিক মুসলিম গোরস্থানে মায়ের কবর জিয়ারত করে সকাল ১০টার দিকে নগর ভবনে পৌঁছান। সোয়া ১১টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে অব্যাহতিপত্র দেন। আগামী চার দিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেন প্যানেল মেয়র গাজী নাইমুল হোসেন লিটুকে। গাজী লিটু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নগরের লাইন রোডে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের সাত মিনিটের বক্তব্যে সাদিক বলেন, ‘আপনাদের ভালোবাসার ঋণ আমি পরিশোধ করতে পারব না। মনে রাখবেন, আমি আপনার কাছে ছিলাম, আছি। আজ আপনাদের কাতারে চলে আসলাম। আমার কর্মকালীন ভুলত্রুটি হলে বরিশালবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। যা করেছি আপনাদের স্বার্থে করেছি।’
এর আগে সদর রোডসহ আশপাশের সড়কে শত শত নেতা-কর্মী দাঁড়িয়ে যান। এ সময় প্ল্যাকার্ড হাতে নগরের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়।
নগরের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মেকানিক্যাল বিভাগের ছাত্র মো. শাকিল বলেন, ক্যাম্পাস থেকে তাদের বড় ভাইরা নিয়ে এসেছেন।
নুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রাশেদুল হাসান জানায়, এলাকার বড় ভাইয়ের ডাকে তারা এসেছে।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশালের সদস্যসচিব কাজী এনায়েত হোসেন বলেন, বিদায় বেলায়ও মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুর্ভোগে ফেলে সাদিক নিজের ইচ্ছা পূরণ করলেন।
বিসিসি সূত্র জানিয়েছে, সাদিক আবদুল্লাহর মেয়াদ শেষ হবে ১৩ নভেম্বর। পরদিন ১৪ নভেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন সাদিকের চাচা নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। চাচার সঙ্গে বিরোধের জেরে নির্বাচনী প্রচারে ছিলেন না সাদিক। এমনকি ভোটও দেননি। সেই জেরে মেয়াদ শেষ হওয়ার চার দিন আগে আজ বৃহস্পতিবার অব্যাহতি নেন।
সাদিক আবদুল্লাহ অব্যাহতি নেওয়ার দিনই আজ একনেকের সভায় বিসিসির উন্নয়নে ৭৯৭ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, এই উন্নয়ন বরাদ্দ বরিশালবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার। নতুন বরিশাল গড়ে তোলার পদক্ষেপ এটি।
প্রসঙ্গত, মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর পাঁচ বছরে এক টাকাও উন্নয়ন বরাদ্দ পায়নি বিসিসি। ফলে উন্নয়ন বঞ্চনা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে নগরবাসীর মধ্যে।