ভোলার লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম চর উমেদ গ্রামের কৃষক মুহাম্মদ জাফর। প্রতিবছরের মতো এ বছর ২৪০ শতাংশ জমিতে প্রথম মৌসুমে ব্রি-৭৪ জাতের বোরো ধান আবাদ করেন। ডিলারের সঙ্গে পরামর্শ করে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন। আশা ছিল স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলবে। কিন্তু সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। দূর থেকে দেখা যায় ধান পেকেছে। কিন্তু কাছে গেলে দেখা যায় পুরো খেতে সব ধান চিটা হয়ে গেছে।
এই মৌসুমে বোরো ধান আবাদ করে সংসারে চালের চাহিদা পূরণ করে বাড়তি আয় করবেন এমন আশাই ছিল এই কৃষকের। কিন্তু তা আর হলো না। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি। হতাশায় দিন কাটছে তাঁর।
কৃষক মুহাম্মদ জাফর বলেন, ‘বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ২৪০ শতাংশ জমিতে সব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধানের আবাদ করেই এই আয়ের ওপর আমার পুরো পরিবার নির্ভরশীল। এখন আমার পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।’
তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, যাঁরা আগেভাগে এই ধান লাগিয়েছেন, কেবল তাঁরাই ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কয়েকজন কৃষক জানান, বিগত দিনে এই এলাকায় বোরো মৌসুমে পানির সংকট থাকে। তাই এই জাতের ধান রোপণে পানির সংকট হওয়ার আশঙ্কায় আগাম ধান রোপণ করেন। কেবল সে কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাঁরা। তবে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, যাঁরা সঠিক সময়ে চারা রোপণ করেছেন তাঁদের ফলন ভালো হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা বলছেন, খেতের বেশির ভাগ ধানের ভেতরে চালের বদলে চিটা হয়েছে। বীজে কোনো সমস্যার কারণে এটা হতে পারে। উচ্চফলনশীল আবার আগাম উঠে যায়। এ দুই কারণে ব্রি-৭৪ জাত বেশ জনপ্রিয়। তবে এবার এই জাতের ধান চাষ করে লোকসানে পড়েছেন ইলিশাকান্দি গ্রামের কৃষক আলো মাতব্বর ও হারুন মেস্তুরী।
সৈনিক বাজার এলাকার কৃষক নুরুল হক মুন্সি বলেন, ‘প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে ভালো ফলনের আশায় বোরো ধান ব্রি-৭৪ আবাদ করি। ধান রোপণের পর মনে হচ্ছিল ফলন ভালো হবে। শিষ বের হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে ধানগুলো পাকতে শুরু করে। ধানগুলোতে ক্রমেই চিটা দেখা দেয়। এরপর স্থানীয় ডিলারের সঙ্গে পরামর্শ করে ধানে ওষুধ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। এখন সব ধানে চিটা হয়েছে। ৫০ শতাংশ জমির ধান কাটলেও এক মণ ধানও হবে না।’
এ ব্যাপারে উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. এমাজউদ্দীন জানান, এই ধান রোপণ করতে হয় ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে। কিছু কৃষক পানি পাবেন না এমন আশঙ্কায় আগে ধান রোপণ করেন, তাঁদেরই এমন ক্ষতি হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, কৃষি বিভাগের তৎপরতায় এবার বেশির ভাগ কৃষকের খেতেই ব্রি-৭৪ জাতের ধান ভালো হয়েছে। কিন্তু যেসব কৃষক ডিসেম্বর মাসে ব্রি-৭৪ রোপণ করেন, তাঁরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে ব্রি-৭৪ ধান কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান এই কর্মকর্তা।