নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ৫৬ বছরেও চিকিৎসা সেবা ফেরেনি। এ পর্যন্ত ৬৭ জন পরিচালক দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁরা কেউ হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কথা স্বীকার করেননি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পরিচালক পদে সেনা কর্মকর্তা নিয়োগের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। গত ২৫ নভেম্বর ৬৮ তম পরিচালক নিযুক্ত হয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর।
আজ সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন মশিউল মুনীর। এ সময় তিনি জানান, বিগত দিনে হাসপাতালটিতে উন্নয়ন ও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব ছিল। জনস্বার্থে লুকোচুরির কিছু নাই। বর্তমানে সারা দেশে সেনাবাহিনীর গ্রহণযোগ্যতা আছে বলেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে তাঁকে শেবাচিম হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি রোগীদের ভালো মানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা চান।
মতবিনিময় সভায় নতুন পরিচালক আরও বলেন, রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ, পরীক্ষা নিরীক্ষার এমআরআই, কোবাল্ট ৬০ সহ নষ্ট থাকা মেশিনগুলো সচল করা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং রোগীদের খাবারের মান বৃদ্ধিতে তিনি কার্যক্রম শুরু করেছেন। এটা চলমান থাকবে।
শেবাচিম হাসপাতালে যত সমস্যা
১ হাজার শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৮০০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন সহস্রাধিক। সেবাপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, রোগীরা এখানে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত হন। প্রতিটি সেক্টর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ও চিকিৎসকসহ নগরের অনেক প্রভাবশালী ঠিকাদার এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক। মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকেরা সিন্ডিকেট ভাঙার পরামর্শ দেন। সরকারি ছুটির দিন প্রতি বিভাগে অন্তত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিতের দাবি জানান সাংবাদিকেরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ৩০টি আইসিইউ শয্যা আছে। কিন্তু নেই ডায়ালাইসিস সুবিধা। হৃদরোগীদের চিকিৎসায় এনজিওগ্রামের সব ব্যবস্থা আছে, নেই চিকিৎসক। দুটি সিটি স্ক্যান মেশিনের একটি পরিত্যক্ত হয়েছে অনেক বছর আগে। ২০২০ সাল থেকে টানা আড়াই বছর থাকার পর অপরটি এখন মাঝে মাঝে বিকল হয়। হাসপাতালের ৫টি আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনের ৩টি প্রায় ২-৩ বছর ধরে অচল। ১৩টি এক্স-রে মেশিনের মধ্যে বিকল ৮ টি। একমাত্র এমআরআই মেশিনটি ৭ বছর যাবৎ বিকল।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল নগর সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, রোগ নির্ণয়ে দামি যন্ত্রপাতিগুলো কর্মচারীরাই অচল করে রোগী বাইরে পাঠায়। সেবা পেতে পদে পদে টাকা দিতে হয়। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সেনা কর্মকর্তা পরিচালকের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। তাঁকে জনস্বার্থে শেবাচিম হাসপাতালকে সেবাবান্ধব করতে হবে।