মোহাম্মদ কাজী রাকিব, পাথরঘাটা
দুর্ঘটনাকবলিত এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক মো. হাম জামাল দাবি করেছেন, যাত্রীদের থেকেই আগুন লেগেছে। সূত্রপাত হয়েছে দোতলা থেকে। এরপর তিনতলায় ছড়িয়ে পড়েছে, যার কারণে প্রাণহানি বেশি ঘটেছে।
তবে তাঁর বক্তব্য নাকচ করে দিয়েছেন ওই লঞ্চের যাত্রী পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ আল মুজাহিদ। স্ত্রীসহ নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বেঁচেছেন তিনি।
ইউএনও বলেন, ইঞ্জিনের বিস্ফোরণ থেকেই মূলত আগুনের সূত্রপাত। এ ছাড়া লঞ্চে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা তেমন ছিল না। লঞ্চের কয়েকজন কেবিন বয়ের বরাত দিয়ে ইউএনও এ তথ্য জানান।
ইঞ্জিনরুমের পাশে থাকা যাত্রী হালিমা বেগম জানান, বিকট শব্দে ইঞ্জিনের বিস্ফোরণ হয়েছে। সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত। সেখান থেকে কোনোমতে তিনি বেঁচে ফিরলেও তাঁর বৃদ্ধ বাবা হামিদ হাওলাদারকে খুঁজে পাচ্ছেন না।
ইঞ্জিন থেকে আগুন লাগার বিষয় নাকচ করে দিয়ে লঞ্চের মালিক হাম জামাল বলেন, ‘মাসখানেক আগে নতুন ইঞ্জিন লাগানো হয়েছে। নতুন ইঞ্জিন লাগানোর পর মাত্র চারটি ট্রিপ ঢাকা-বরগুনা চলাচল করেছে।’ মালিক দাবি করেন, লঞ্চে থাকা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতির মেয়াদ আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত আছে।
দুর্ঘটনাকবলিত অভিযান-১০ লঞ্চটির যাত্রী ধারণক্ষমতা ৯৫০ জন বলেও জানান জামাল।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশে ছেড়ে আসা লঞ্চে বারো শর বেশি যাত্রী ছিল বলে জানিয়েছেন ইউএনও হোসাইন মোহাম্মদ আল মুজাহিদ।
ইউএনও জানান, ‘রিভার ভিউয়ের দিকে কেবিনে যেসব যাত্রী ছিল, তারা অনেকেই বের হতে পেরেছে। যাদের কেবিন লঞ্চের মাঝখানে ছিল, তাদের অনেকেই ধোঁয়ার কারণে বাইরে বের হতে পারেনি।’
লঞ্চের এক যাত্রী রাজু আহমেদ জানান, লঞ্চে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট ও বয়া ছিল। হাতেগোনা পাঁচ-সাতটি বয়া নদীতে ভাসতে দেখেছেন তিনি। ৩২৩ নম্বর কেবিনের যাত্রী রাজু আরও জানান, মাস্টার ব্রিজের পেছনেই ছিল তাঁর কেবিন। চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে কেবিন থেকে বের হয়ে জানতে পারেন আগুন লাগার কথা। তখন লঞ্চের সারেংকে জিজ্ঞেস করলে জানানো হয়, আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তাঁদের ভুল তথ্যের কারণেই হতাহত বেশি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন রাজু।
এদিকে লঞ্চ দুর্ঘটনার মূল কারণ উদ্ঘাটনে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।