বরগুনার পাথরঘাটায় মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মোহাম্মদ সোহাগ সিকদার নামে সাবেক এক শ্রমিক লীগ নেতাকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে স্থানীয়রা আটক করে গণধোলাই দিয়ে তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করেন। মোহাম্মদ সোহাগ সিকদার উপজেলা কালমেঘা ইউনিয়নে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি। এর আগে গত শনিবার রাতে চোরাইকৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করে সোহাগের সহযোগী রাকিবকে আটকের পর পুলিশে দেন এলাকাবাসী। এ ঘটনায় শনিবার রাতে সোহাগকে প্রধান আসামি করে চুরির মামলা দায়ের করেন মোটরসাইকেলটির মালিক হৃদয়।
সোহাগ সিকদারের বাড়ি কালমেঘা ইউনিয়নের গোলবুনিয়া এলাকায়। সোহাগ নিজেকে উপজেলা শ্রমিক লীগ নেতা দাবি করেন।
তবে পাথরঘাটা উপজেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হেমায়েত উদ্দিন ভুট্টো আজকের পত্রিকাকে বলেন, সোহাগ কালমেঘা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে কোনো পদে নাই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে হৃদয় নামের এক ব্যক্তি তাঁর মোটরসাইকেলটি বাড়ির সামনে রেখে ভেতরে যান। এর কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে তালা ভেঙে সোহাগকে মোটরসাইকেলটি নিয়ে যেতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে রাত ৯টার দিকে হৃদয়ের কাছে অনেক অনুরোধ করে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে রফাদফা হয়।
এরপর সোহাগ পার্শ্ববর্তী মঠবাড়িয়া উপজেলা থেকে মোটরসাইকেলটি এনে ফিরিয়ে দেন। এ ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে পড়ে। পরে গতকাল বিকেলে সোহাগকে দেখে উত্তেজিত জনতা ধরে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন। এ ছাড়া তিন মাস আগে কালমেঘা ইউনিয়নের ছোনবুনিয়া এলাকার মুন্নি বেগমের বাড়িতে চুরি করে ২০ হাজার টাকা, স্বর্ণের চেইনসহ মালামাল নিয়ে যান সোহাগ। তখন তাঁকে চিনে ফেলায় মুন্নিসহ তাঁর স্বামীকে মারধর করে রক্তাক্ত করে রাস্তায় ফেলে রাখেন তিনি। এ ছাড়া সোহাগ সিকদার শ্রমিক লীগের নেতা দাবি করে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে আসছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই মারধর এবং মাদক দিয়ে হয়রানি করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মোটরসাইকেলচালক হৃদয় আজকের পত্রিকাকে বলেন বলেন, ‘গত শুক্রবার আমার মোটরসাইকেলটি চুরি করে নিয়ে গেলে পরে রাতে ২০ হাজার টাকা দিয়ে ফেরত নিতে হয়েছে। আমার গাড়িটি সোহাগ নিয়েছে যেনেও ভয়ে কিছু বলতে পারিনি। তাকে কেউ কিছু বললেই মারধরের শিকার হতে হয়। পরে স্থানীয়দের পরামর্শে শনিবার থানায় মামলা দায়ের করি।’
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মো. বাবুল মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সোহাগ একজন খারাপ প্রকৃতির লোক। সে পারে না এমন কিছু নেই। সে দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় মোটরসাইকেল চুরি, মানুষের বাড়িতে চুরি এবং তার এলাকায় মাদক সরবরাহ করে আসছে। তাকে কেউ কিছু বললেই বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম বলে পার পেয়ে যায়। আশা করছি এবার প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম নাসির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সোহাগ কালমেঘা ইউনিয়নের ত্রাস। তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। সে আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করলেও তার দলীয় কোনো পদ-পদবিতে নেই।’
এ বিষয়ে পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম হাওলাদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সোহাগের বিরুদ্ধে আগেই মোটরসাইকেল চুরির মামলা রয়েছে। পুলিশ তাকে আটকের জন্য খুঁজতে ছিল। এর মধ্যেই জনতা আটক করে তাকে থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে। আজ সোমবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’