পিরোজপুর প্রতিনিধি
ঢাকার সদরঘাটে লঞ্চের রশি ছিঁড়ে নিহত পাঁচজনের মধ্যে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার একই পরিবারের তিনজন রয়েছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে বিল্লাল হোসেনকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা আলেয়া বেগম। অসহায় বৃদ্ধার খোঁজ নেওয়ার মতো আর কেউ রইল না! ছেলের কথা জানতে চাইলেই হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠেন আলেয়া।
লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত বিল্লাল হোসেনের (২৬) বাড়ি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়নের খয়ের ঘটিচোরা এলাকায়। ওই ঘটনায় নিহত হয়েছেন তাঁর স্ত্রী মুক্তার খাতুন (২২) ও মেয়ে মাইশা আক্তার (৪)।
বিল্লালের মা আলেয়া বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ঢাকার গাজীপুরে থাকত। গাজীপুরের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে অ্যাডমিন শাখায় চাকরি করত। ঈদের দিন পরিবার নিয়ে বাড়ি আসার জন্য সদরঘাটে এলে লঞ্চের রশি ছিঁড়ে আমার ছেলে ও তার পরিবারকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। হাসপাতালে নিলে ডাক্তার বলে ওরা সবাই মারা গেছে। এ কেমন মৃত্যু!’
আলেয়া বলেন, তাঁর ছেলের স্ত্রী মুক্তা খাতুন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তিনি বলেন, ‘সবাই বলছে তিনজন মারা গেছে, আমার পরিবারের তো চারজনই মারা গেছে! কেউ এসে খবর নেয়নি। এখন আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না। আমি এর বিচার চাই।’
ঈদের দিন সদরঘাটে এমভি তাসরিফ-৪ ও পূবালী-১ লঞ্চ পন্টুনে বাঁধা ছিল। দুটি লঞ্চের মাঝখানে ফারহান-৬ লঞ্চটি ভিড়তে গেলে এমভি তাসরিফের রশি ছিঁড়ে ঘাটে থাকা লোকজনের ওপর পড়ে। এতে বিল্লাল, তাঁর স্ত্রী মুক্তা ও মেয়ে মাইশা মারা যায়।
দাউদখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুল হক রাহাত বলেন, ‘ঈদের দিন ঢাকার সদরঘাটে লঞ্চের রশি ছিঁড়ে বিল্লাল হোসেন, তাঁর স্ত্রী ও শিশুকন্যা নিহত হয়। আমাদের এখানে লাশ আসার পরে আমরা জানাজা দিয়ে দাফন কাজ সম্পন্ন করি। বিল্লালের মা অনেক কষ্ট করে ছেলেকে বড় করেছে। তিনি মানুষের বাড়িতে কাজ করে সাহায্য-সহযোগিতা চেয়ে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছেন। একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে তিনি অনেকটা ভেঙে পড়েছেন। আমরা আমাদের সাধ্যমতো সহায়তা করলেও একমাত্র ছেলে হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকাই তাঁর জন্য অনেক কষ্টের!’