পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নের আটঘরের ঐতিহ্যবাহী নৌকা যাবে এবার জার্মানিতে। একটি বা দুটি নৌকা নয়; দশটি নৌকা যাবে ইউরোপের দেশটিতে। তবে এ নৌকা কোনো যাত্রী নিয়ে জার্মানি যাবে না। চালানো হবে না কোনো খাল বা নদীতে। বসার শৌখিন আসন হিসেবে ব্যবহৃত হবে আটঘরের এই নৌকা। এক জার্মান নাগরিক কার্গো বিমানে বহন করে নিয়ে যাবেন এ নৌকাগুলো। মহাখুশিতে এখন চলছে সেই অর্ডারি নৌকার কাজ।
আটঘরে ঘুরতে এসে কাঠের তৈরি নৌকা পছন্দ করেন এক জার্মান নাগরিক। তিনি নিজ দেশে ব্যবসার উদ্দেশে নৌকাগুলো নেবেন বলে জানিয়েছেন নৌকার কারিগররা। সেই নৌকা তৈরির কারিগর মো. আজিজুল হক এবং সন্তোষ সরকার এ কথা নিশ্চিত করেছেন।
নৌকার কারিগররা বলেছেন, জার্মান নাগরিক প্রাথমিকভাবে দশটি নৌকা নেওয়ার জন্য তাঁদের অগ্রিম বেশ কিছু টাকা পরিশোধ করেছেন। নৌকাগুলো জার্মানের বাজারে কদর পেলে পরের চালানে তাঁদের কাছ থেকে আরও ২০টি নৌকা নেওয়া হবে। তাঁদের কাজ প্রায় শেষ। এখন অপেক্ষার পালা।
আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার বলেন, ‘নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা পেয়ারা ও আমড়ার জন্য বিখ্যাত। এ ছাড়া আটঘরের তৈরি নৌকার কদর দেশের সর্বত্র। এখানকার তৈরি কাঠের নৌকাগুলো নজর কাড়ে নৌপ্রেমীসহ যেকোনো গৃহকর্তাদের। যে কারণে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এখান থেকে শত শত নৌকা বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এখন আটঘরের বিখ্যাত নৌকা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপের জার্মানিতে যাবে। এ জন্য আমরা গর্বিত। আটঘরের নৌকার কারিগরদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য আমার ইউনিয়ন পরিষদ পাশে থাকবে। পাশাপাশি এ শিল্পকে আরও অগ্রগতি করার জন্য সরকারের সহযোগিতায় থাকলে বিশ্ব বাজারে আমাদের দেশের অর্থনীতি চাঙা হওয়াসহ ফুটে উঠবে আমাদের নেছারাবাদের নাম।’
আজিজুল হক বলেন, ‘আমি তাঁদের পছন্দমতো ডিজাইনের একটি নৌকা তৈরি করে দিই। তাঁরা সেটি পছন্দ করেন। এরপর আমাকে একই ডিজাইনের আরও ১০টি নৌকা তৈরি করতে বলে বায়না দেন। ওই বিদেশি পর্যটকের সঙ্গে থাকা এক দেশি লোক বলেছেন, ‘‘আপনারা নৌকা তৈরি করে দিন। এ নৌকা জার্মানিতে নিয়ে বিক্রি করা হবে। সেখানকার বাজারে এ নৌকার চাহিদা বাড়লে সামনে আরও নৌকা নেওয়া হবে।’’’
নৌকা কারিগর আজিজুল মিয়ার সঙ্গে থাকা সন্তোষ সরকার নামে অপর এক নৌকা কারিগর বলেন, ‘প্রতিটি নৌকা তৈরিতে ১০ হাজার টাকায় চুক্তি হয়েছে। তাঁদের দেখানো ডিজাইন অনুযায়ী নৌকাগুলো তৈরি হয়েছে। ওই জার্মানির নাগরিকের সঙ্গে থাকা দেশি লোক যা বুঝিয়েছেন, এই নৌকাগুলো সেখানকার বাজারে দেখানো হবে। চাহিদা থাকলে পরবর্তীতে আরও অনেক নৌকা নেওয়া হবে।’
নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামান জানান, ‘উপজেলার আটঘরের নৌকা অনেক সুন্দর। আটঘরের নৌকা জার্মানিতে যাবে এ খবর খুবই আনন্দের। বাংলাদেশের আটঘরের নৌকা বিদেশে যাবে এতে দেশের পণ্য যেমনি বিশ্ববাজারে পরিধি বৃদ্ধি করবে; তেমনি অত্র উপজেলার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ সুগম হবে।’