পটুয়াখালী প্রতিনিধি
জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজিত সভায় আওয়ামী লীগের এক নেতার উপস্থিতি নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত এই স্মরণ সভায় গণ-অভ্যুত্থানে নিহত শহীদদের পরিবার এবং আহত ব্যক্তিরা আমন্ত্রিত ছিলেন। কিন্তু সেখানে রাঙ্গাবালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বড়বাইশদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফরহাদ হোসেনের উপস্থিতি সমালোচনার জন্ম দেয়।
স্মরণ সভার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর শিক্ষার্থীরা এই বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী (বাড়ি রাঙ্গাবালী) তানজিমুল আবিদ বলেন, ‘আমরা যারা ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃত্যুকে হাতে নিয়ে যুদ্ধ করলাম তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করারও প্রয়োজনবোধ করেনি। তারা কিনা আওয়ামী লীগের পোস্টেড নেতাকে নিয়ে স্মরণ সভা করে? অট্টহাসি পায় আমার, কষ্টভরা বুক নিয়ে গগণবিদারি চিৎকার দিতে ইচ্ছা করে। এর চেয়ে বরং আমরা যারা রাজপথে ছিলাম এদের ধরে ধরে ফাঁসি দিয়ে দিন।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নর্দান ইউনিভার্সিটির অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থী (বাড়ি রাঙ্গাবালী) ইমরোজ মাহমুদ রুদ্র ফেসবুক লিখেছেন, ‘দেড় হাজার শহীদের সঙ্গে বেইমানি করলেন? আজকে রাঙ্গাবালী উপজেলায় জুলাই বিপ্লবের শহীদ এবং আহতদের স্মরণে একটি স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়েছিল, গুড ইনিশিয়েটিভ! কিন্তু কথা হচ্ছে, যেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রদের মেরে শহীদ করল তাদের পাশে নিয়ে শহীদদের স্মরণে সভা করলেন? এটা কি শহীদের সঙ্গে তামাশা নয়? আপনাদের স্মরণ সভায় ছাত্র আন্দোলনের সময় মাঠে সক্রিয় ছিল এমন প্রতিনিধিরা কয়জন ছিল? আওয়ামী লীগের পোস্টেড নেতাকে পাশে রেখে শহীদ স্মরণসভা! বাহ্! ঘৃণাভরে নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইকবাল হাসান বলেন, ‘স্মরণ সভায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যে ব্যক্তির উপস্থিতি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তার রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে আমি জানতাম না। উনাকে আমাদের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সভায় উপস্থিত কেউ বিষয়টি আগে জানালে আমরা পরিস্থিতি এড়াতে পারতাম।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সামনের সারিতেই বসে ছিলেন ফরহাদ হোসেন। ইউএনওর চেয়ার থেকে চারটি চেয়ারের পরেই উত্তর সারির পঞ্চম চেয়ারে ছিলেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলেছেন, কীভাবে তিনি সভায় এলেন এবং তাকে কে আমন্ত্রণ জানাল।
শহীদদের স্মরণে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সভায় ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় কোনো প্রতিনিধি না থাকার বিষয়টি নিয়েও শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের ভাষ্যে, শহীদদের স্মরণে সভা একটি ভালো উদ্যোগ, তবে এতে আন্দোলনের প্রতিনিধিরা না থাকলেও ফ্যাসিস্ট নেতারা উপস্থিত। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
এই ঘটনায় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নামে এমন বিতর্কিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।