বরগুনা প্রতিনিধি
বরগুনার বামনায় লাইসেন্সবিহীন সুন্দরবন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) মো. আশরাফুল আলমসহ ৩ সদস্যের একটি তদন্ত দল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তাঁরা নিহতের বাড়িতে যান এবং তাঁদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। অন্য সদস্যরা হলেন উপপরিচালক এম. রবিউল ইসলাম ও বরগুনা সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ডা. মেহেদী হাসান।
আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত টিম বামনা উপজেলার গুদিঘাটা গ্রামের নিহত প্রসূতি মেঘলা আক্তারের বাবা ছগির হোসেনের বাড়িতে যান এবং তাঁদের কাছে ঘটনার বিস্তারিত শোনেন। পরে নিহত প্রসূতি মেঘলা আক্তারের কবর জিয়ারত শেষে সুন্দরবন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি ঘুরে দেখেন এবং বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান ও বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল ইমরানের সঙ্গে কথা বলেন।
এদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালকের কাছে নিহতের পরিবার অভিযোগ করেন, ক্লিনিকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা উপজেলার ডৌয়াতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মামলার আসামি হওয়ায় এবং তিনি গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে থাকার কারণে তাঁদেরকে বিভিন্ন সময় হুমকির শিকার হতে হচ্ছে।
তাঁরা আরও অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান জেল থেকে বের হলে তাঁদেরকে এলাকা ছাড়া করা হবে বলেও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন। ফলে বর্তমানে তাঁরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
এ ঘটনায় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক ও তদন্ত টিমের প্রধান মো. আশরাফুল আলম বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে অবহিত হয়ে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটন করতে বামনাতে এসেছে। আমরা যেটা পেয়েছি, অনুমোদনবিহীন এই ক্লিনিকে মেয়েটিকে এক অর্থে সিজারের নামে হত্যা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের এই বিশৃঙ্খলায় আমরা মানবাধিকার কমিশন খুব উদ্বিগ্ন। আমরা এই ঘটনা তদন্ত করে বুঝতে চাই, তাদের কোথায় অবহেলা ছিল। এই মেয়েটির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, আমরা চাই তাদের যেন আইনের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু বিচার হয়। এখানে আসার পরে দেখলাম, এই পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে ভুক্তভোগীরা খুব শঙ্কিত। তাঁদেরকে আসামিপক্ষরা বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি, হুমকি দিচ্ছে। আমরা এটা নিয়েও উদ্বিগ্ন। পরিবারটি যাতে ন্যায়বিচার পায়, এটা অবশ্যই রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের কমিশন সকল প্রকার সহযোগিতা এই পরিবারকে করবে।
১৫ জানুয়ারি রাতে লাইসেন্সবিহীন ডৌয়াতলা সুন্দরবন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি ও তাঁর গর্ভের সন্তানের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৮ জন আসামির মধ্যে সুন্দরবন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান ও উপজেলা ডৌয়াতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমানকে পলাতক অবস্থায় শনিবার ভোররাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি বাসা থেকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।