ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার সাগর নন্দিনী-২ থেকে তেল অপসারণের সময় ফের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে ১০ পুলিশ সদস্যসহ ১৫ জন দগ্ধ হয়েছেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় শহরের খেয়াঘাটে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে শনিবার (১ জুলাই) বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয় সাগর নন্দিনী-২।
দমকল বাহিনীর ১২টি ইউনিট দীর্ঘ ১১ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আজ (মঙ্গলবার) ভোর ৬টার দিকে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা।
বিস্ফোরণের পর ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম ও পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল সার্বিক বিষয়ে তদারকি করেন। ফলে নদী-তীরবর্তী বাসিন্দারা গৃহপালিত প্রাণী এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে স্টেডিয়ামসংলগ্ন প্রাইমারি স্কুল ও ফাজিল মাদ্রাসায় রাত্রি যাপন করেন।
জানা যায়, গত শনিবার (১ জুলাই) বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয় সাগর নন্দিনী-২। এতে দগ্ধ চারজন শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন। গতকাল সোমবার নিখোঁজ চারজনের মৃতদেহ ও ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়।
বিস্ফোরিত জাহাজে ডিজেল ও পেট্রল ছিল ১১ লাখ লিটার। গত রোববার প্রায় ৭ লাখ লিটার তেল অপসারণ করা হয়েছে। ওই স্থানে সাগর নন্দিনী-২ ও সাগর নন্দিনী-৪ নোঙর করা ছিল। গতকাল (সোমবার) বাকি তেল অপসারণ করার সময় এ বিস্ফোরণ ঘটে।
বিস্ফোরণে শরীরের প্রায় ৬০ ভাগ দগ্ধ হওয়া আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন ঝালকাঠি পুলিশ লাইনের কনস্টেবল শওকত জামিন (২৪) ও দীপ সমাদ্দার (২৫)। অপরজন সুকানী শরীফ আহমেদ (৩৫)। আহতদের মধ্যে কনস্টেবল শওকত জামিন (২৪) ও জাহাজের স্টাফ শরীফ আহমেদকে (৩৫) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
আহত সাগর নন্দিনী-২ জাহাজের বাবুর্চি বেলাল হোসেন বলেন, ‘একটি পাম্প সচল করে ৪/৫ ঘণ্টা কাজ করা যায়। সেখানে অতিরিক্ত কাজ করার সময় পাম্প গরম হয়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। আমি ছিলাম রান্নার কাজে, আগুন দেখেই নদীতে লাফিয়ে পড়ি। ওই সময়ে নৌবাহিনীর দুজন গোসল করতে ছিল। তাঁদের কোনো সন্ধান এখনো পাওয়া যাচ্ছে না।’
আহত এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘আমরা জাহাজের পাশেই ট্রলারে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হওয়ায় আমাদের ট্রলারের চালকও নদীতে লাফিয়ে পড়েন। আমরা মহাবিপদের মধ্যে পড়ে যাই। ট্রলারটিকেও সরাতে পারছিলাম না। আগুনের তাপ প্রচণ্ডভাবে আমাদের শরীরে লাগে। জীবন বাঁচাতে আমরাও যে যার মতো করে নদীতে লাফিয়ে পড়ি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নদী-তীরবর্তী বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য রাতে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামসংলগ্ন মসজিদবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছিল।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. এইচএম জহিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সুগন্ধা নদীতে ফের বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দগ্ধ ও আহত ১০ পুলিশ সদস্যসহ ১৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে আলাদা ইউনিট চালু করে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, এঁদের মধ্যে গুরুতর আহত দুই পুলিশ সদস্যসহ তিনজনকে বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকি ১২ জনকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালেই চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। রোগীদের সার্বিক চিকিৎসার বিষয়ে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আমির হোসেন আমু এমপি মহোদয় সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছেন বলেও জানান সিভিল সার্জন।
আরও পড়ুন—