‘ডাকাত দলের মার খেয়ে সাগরে পরে গিয়ে আমরা ৯ জন একটি বয়া ধরে ৭০ ঘণ্টা ভেসে ছিলাম। এরপর একটি জালে আটকে যাই। এর আগে আমার বড় ভাই কাইয়ুম জোয়াদ্দার সাগরে ভাসমান অবস্থায় আমার হাতেই মারা যান, এভাবে একে একে আরও চারজন মারা গেলে তাদেরকে সাগরে ভাসিয়ে দেই।’
সাগর থেকে জীবিত উদ্ধার জেলে ইয়াসিন আজ সোমবার আজকের পত্রিকাকে একথা বলেন। তিনি পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর বাড়ি বরগুনার তালতলী উপজেলায়।
এর আগে ভোররাতে বঙ্গোপসাগর থেকে ভাসমান অবস্থায় চার জেলেকে উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে এক জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৫টায় মারা যান। মৃত আব্দুল হাই তালতলীর নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের চামুপাড়া গ্রামের আচমত আলী হাওলাদারের ছেলে।
পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন বলেন, ‘উদ্ধার হওয়া চার জনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এদের মধ্যে আব্দুল হাইয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। বিকেল ৫টায় পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।’
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে ডাকাতির সময় ডাকাতের পিটুনি খেয়ে সাগরে পড়ে যাওয়া ৯ জেলের মধ্যে ৪ জেলেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এসব জেলেরা একটানা ৭০ ঘণ্টা ভাসমান অবস্থায় ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গোপসাগর থেকে এফবি মা মরিয়ম ট্রলার তাঁদের উদ্ধার করে। সোমবার সকালে গভীর বঙ্গোপসাগরে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়।
গত শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার পথে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে পায়রা বন্দর থেকে পশ্চিমে বয়া এলাকায় জলদস্যুরা হামলা চালায়। এ সময় ৯ জেলেকে জিম্মি করে ট্রলারে থাকা মালামাল লুটে নেয়। এ ছাড়াও ৯ জেলেকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়।
দক্ষিণ জোন কোস্ট গার্ডের অপারেশন অফিসার লেফটেন্যান্ট এম হাসান মেহেদী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিখোঁজ ৯ জেলের মধ্যে ৪ জনকে তালতলীর একটি ট্রলার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের পাথরঘাটা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের মৃত্যু সংবাদ পেয়েছি। বাকিদের উদ্ধারে ও জলদস্যুদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’
আরও পড়ুন: