বরিশালে বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে জুতা কোম্পানি ফরচুন সু এর শ্রমিকেরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর কাউনিয়ার বিসিক এলাকায় বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভ বন্ধে প্রতিষ্ঠানটির আনসার বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের ওপর গুলি করলে আন্দোলন সংঘর্ষে রুপ নেয়।
এ সময় আনসারদের হামলায় প্রতিষ্ঠানের ৪ শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন। আহতরা হলেন- সুইং বিভাগের কর্মচারী মেহেদী হাসান, কামরুল হাসান, ফিনিসিং বিভাগের মো. সুমন ও আবুল হাসান।
এদের চারজনকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কারখনার আনসার কমান্ডার ইউসুফ আলী বলেন, ‘শ্রমিকদের হামলা রোধে ১০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়েছে।
ওই ঘটনার জেরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা প্রতিষ্ঠানটিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের আর এক দফায় সংঘর্ষ হয়। শ্রমিকদের হামলায় কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান আহত হন।’
কারখানার ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা জানান, ৩ মাস ধরে বেতন দেয় না ফরচুন কর্তৃপক্ষ। চাইতে গিয়ে আনসারদের গুলির শিকার হন তারা। সেখানকার এক শ্রমিক জানান, তার বেতন ১০ হাজার। তাকে ২ মাসে মাত্র ৫ হাজার টাকা দিয়েছে। তিনি বলেন, শনিবারও ছুটি পাই না। পাওনা চাইলেই ধমক খেতে হয়।
ফরচুন সু কোম্পানির শ্রমিক লিজা আক্তার জানান, তাদের তিন মাসের বেতন বকেয়া ছিল। ওভারটাইমও কোনো শ্রমিককে দেওয়া হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার তা পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু শ্রমিকেরা আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বকেয়া চাইতে গেলে তাদের ১৫ দিনের টাকা পরিশোধ করার কথা বলা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হলে আচমকা সুইং বিভাগের কর্মচারী মেহেদী হাসান এর ওপর এক আনসার সদস্য গুলি করে। এরপর তারা এলোপাতাড়ি আরও গুলি চালালে তিন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন। এ খবর ছড়িয়ে পরলে পুরো প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন ছড়িয়ে পরে।
অপর শ্রমিক সাইফুল জানান, তাদের বেতন শিটে স্বাক্ষর নেওয়া হয় ১২ হাজার টাকা। দেওয়া হয় ৬ হাজার। তাও আবার তিন মাসের বকেয়া। ওভার টাইম করানো হলেও টাকা দেওয়া হয় নামেমাত্র। এর প্রতিবাদ করলেই তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।
তবে ফরচুন সু কোম্পানির স্বত্বাধিকারী ও ফরচুন বরিশালের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘কারখানার আনসার সদস্যদের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে, তবে বেতন বকেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।’
সরেজমিনে বিসিক শিল্প নগরী এলাকায় ফরচুন সু কোম্পানিতে গিয়ে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটির ৫টি ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় শ্রমিকেরা। ভবনের দরজা, জানালা ও গেট ভাঙচুর করে। শ্রমিকদের পরিবহনের জন্য রাখা ৫টি বাস ভাঙচুর করা হয়। পরে কাউনিয়া থানা-পুলিশ এসে শ্রমিকদের ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কাউনিয়া থানার ওসি আসাদুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বকেয়া বেতনভাতার দাবিতে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করলে প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা ভাঙচুর করে। চারজন শ্রমিক ও কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আহত হয়েছেন। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
এদিকে খবর পেয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গেলে তার উপস্থিতিতে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকেরা আন্দোলন স্থগিত করেন। এ নিয়ে শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মালিক পক্ষের বৈঠকের কথা রয়েছে। কারখানা এলাকায় বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন আছে।
এদিকে ফরচুনে শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে শুক্রবার বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বাসদ।