ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং নদী বন্দরকে ৪ নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পটুয়াখালীতে রিমালের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিকেল ৪টার পর থেকে প্রবলবেগে বাতাস বইছে। কখনো কখনো তীব্রবেগে ঝড় বাতাস হচ্ছে। এতে উত্তাল হয়ে উঠেছে নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগর। বাতাসের সঙ্গে কখনো কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। পটুয়াখালী-ঢাকা নৌরুটসহ সকল রুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।
এদিকে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সাগর তীরের রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ও চরমোন্তাজ ইউনিয়ন এবং কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। তলিয়ে গেছে শতাধিক ঘরবাড়ি। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অন্তত ২০ হাজার মানুষ।
বিশেষ করে রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরমোন্তাজ, চর আন্ডা, নয়ার চর, বৌ-বাজার, মোল্লার গ্রাম ও উত্তর চরমোন্তাজসহ ১০টি গ্রাম, একই উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের উত্তর চালিতাবুনিয়া, গরুভাঙ্গা, চিনাবুনিয়া, মরাজঙ্গিসহ ৫টি গ্রাম এবং কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া, মঞ্জুপাড়া, চর চান্দুপাড়া, হাসনাপাড়া, চন্দপাড়া, পশুরিবুনিয়া, ছোট পাঁচ নম্বর, বড় পাঁচ নম্বর ও বানাতিসহ ৯টি গ্রামের ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে ২৪টি গ্রামের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি।
এ ছাড়া দুপুরের দিকে কুয়াকাটার অনন্তপাড়া এলাকার বেড়িবাঁধের বাইরের বাসিন্দা মো. শরীফুল ইসলাম শরীফ (২৪) নামে এক জেলে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় জোয়ারের পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। পরে এক ঘণ্টা পর লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। এর ফলে চরম আতঙ্কে ও ঝুঁকিতে রয়েছে চালিতাবুনিয়া, চরমোন্তাজ ও লালুয়া এই তিনটি ইউনিয়নের অর্ধ লাখ মানুষ। তারা এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।
রাঙ্গাবালীর চালিতাবুনিয়া এলাকার কৃষক মো. কবির সরদার (৫৫) বলেন, ‘ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে এই এলাকার অনেক মানুষের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এখনো ঘরের চার পাশে পানি। অথচ রাতের জোয়ারও ঘনিয়ে আসছে। তাই কি হয় শেষপর্যন্ত বুঝতে পারি না। আমরা এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে আমার ইউনিয়নের এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অরক্ষিত রয়েছে। মূলত ওই জায়গা দিয়ে প্রবলবেগে জোয়ারের পানি ঢুকে অন্তত ৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ওই এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মেরামত করা জরুরি।’
জেলা প্রশাসক মো. নূর কুতুবুল আলম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে এবং উপকূল থেকে লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রেডক্রিসেন্ট ও সিপিপির স্বেচ্ছাসেবক টিম, মেডিকেল টিমসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু প্রস্তুত রয়েছে।’