‘আমার মায়ের কবরটার অস্তিত্বও নেই। ঘর থেকে নদীর দূরত্ব মাত্র পাঁচ হাত। কয়েক দিন আগেই আমার ভাই ২-৩ লাখ টাকা খরচ করে পুরোনো ঘর ভেঙে নতুন ঘর তোলে। সেই ঘরটাও এখন যেকোনো মুহূর্তে নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। আমার বাবার ১০০-১৫০ শতাংশ জমি এই নদীর পেটে গেছে। আমার দাদা, দাদি, ফুফু, বাবার কবরও গেছে নদীর ভয়াল গ্রাসে।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন নলছিটি উপজেলার তিমিরকাঠি গ্রামের শাফিন আমান।
সুগন্ধা নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও জনপদ। নদীপারের ১০ গ্রামে তীব্র ভাঙনে দিশেহারা শত শত পরিবার। দফায় দফায় বাড়ি ছেড়েও রক্ষা মিলছে না। বর্ষা মৌসুম এলেই শঙ্কায় দিন কাটে নদীপারের মানুষের।
এলাকাবাসী জানায়, সুগন্ধা নদীর ভাঙনে শতাধিক পরিবার তাদের মাথা গোঁজার শেষ সম্বল ভিটেমাটি হারিয়েছে। একসময়ের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো নদীর ভয়াল গ্রাসে সব হারিয়ে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। জেলার তিমিরকাঠি, দরিরচর, খোজাখালী, মল্লিকপুর, সিকদারপাড়া, বহরমপুর, ষাটপাকিয়া, কাঠিপাড়া, অনুরাগসহ ১০টিরও বেশি গ্রামের বড় অংশ নদীর পেটে গেছে। এর মধ্যে খোজাখালী, দরিরচর, তিমিরকাঠি, সিকদারপাড়া গ্রামের সবচেয়ে বেশি অংশ বিলীন হয়েছে নদীতে।
শুধু ঘরবাড়ি নয়, নদীগর্ভে গেছে নলছিটি-দপদপিয়া আঞ্চলিক সড়কও। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ ভাঙন প্রতিরোধে নামমাত্র ব্যবস্থা নিয়েছে, যা কোনো কাজে আসছে না।
এ ব্যাপারে জেলা পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা বলেন, প্রথম পর্যায়ে সাতটি স্থানে ১৩ কিলোমিটার এলাকায় নদীভাঙন রোধের জন্য ৮৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তা অনুমোদন করা হলে নদীপাড়ের মানুষকে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করা যাবে বলে আশা করি।