হৃদয় হোসেন মুন্না, বেতাগী (বরগুনা)
বরগুনার বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদ ইউনিয়নের মুক্তা বেগম। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন স্বামী রিয়াজ হাওলাদার। কাজ করতেন ঢাকার একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে। গত ২৩ ডিসেম্বর ২৮ দিনের সদ্যোজাত পুত্র সন্তানকে দেখতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে চড়েন তিনি। ওই দিন লঞ্চটি ঝালকাঠীর সুগন্ধা নদীতে পৌঁছালে রাত ৩টার দিকে লঞ্চটিতে আগুন লেগে যায়। এতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে যারা মারা যান তাঁদের মধ্যে ছিলেন রিয়াজও।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন মুক্তা। দুই সন্তান আর শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে দুর্বিষহ দিন কাটছে তাঁর। স্বামীকে হারানোর পর থেকেই তাঁদের জীবনে নেমে এসেছে বিষাদের কালো মেঘ। ঈদের আনন্দ তো দূরে থাক এখন দুবেলা দুমুঠো খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে তাঁদের।
শুধু রিয়াজ হাওলাদারের পরিবারই নয়। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর অভিযান ১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রিয়জন হারিয়েছেন অনেকেই। নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারে এ বছরের ঈদের আনন্দ মলিন হয়ে গেছে। কেউ খুঁজছে নিখোঁজ ভাইকে, কেউ খুঁজছে বোন আবার কেউ খুঁজছে বাবা-মাকে। স্বজন হারানো পরিবারগুলোতে নেই ঈদের আনন্দ। বরং ঈদের আগমন যেন বেদনাকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ২৮ দিনের ছেলের মুখ দেখতে সেদিন বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন রিয়াজ। কিন্তু ছেলের মুখ আর দেখতে পারেননি। সেই ছেলের বয়স এখন পাঁচ মাস। আমাদের ঈদ আনন্দ তাঁর বিদায়ের সঙ্গে শেষ হয়ে গেছে।
দুই ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন উদ্বিগ্ন মুক্তা বেগম। তিনি বলেন, ‘পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে আমরা এখন দিশেহারা। দুই ছেলে আর শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে অনেক অভাবে সংসার চলছে। ঈদ তো পরের কথা, ছেলেদের কীভাবে মানুষ করব এখন সেই চিন্তাই করি এখন।’
রিয়াজের বাবা আব্দুল কাদের বলেন, ‘সামান্য যে জমিটুকু আছে তা চাষাবাদ করে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছি। যত দিন শরীরে শক্তি আছে তত দিন সংসার চলবে। কিন্তু এরপর সংসার কীভাবে চলবে। নাতিদের ভবিষ্যৎ কী হবে সে আতঙ্কে দিন কাটছে এখন।’
মুক্তার মতো সুগন্ধা ট্র্যাজেডিতে অনেকে তাঁদের প্রিয়জন হারিয়েছেন। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে বহু পরিবারেরই অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে। সরকারি সহযোগিতা বড় দরকার তাঁদের।
উল্লেখ্য, ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে ঘটনায় ৪৯ জন। এর মধ্যে ১৭টি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে বরগুনায় ২৩ ও ঝালকাঠিতে একজনকে দাফন করা হয়েছে। এ ছাড়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন আটজন।