মো. তারিকুল ইসলাম, পাথরঘাটা (বরগুনা)
বরগুনার পাথরঘাটায় নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে। টাকার লোভে পড়ে গৃহস্থরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ছোট-বড় গাছ বিক্রি করে দিচ্ছেন। এসব গাছ জ্বালানি ও কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, নির্বিচারে কেটে ফেলায় পরিবেশের পাশাপাশি গাছ পরিবহনের কারণে সড়কেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
সম্প্রতি পাথরঘাটা-খুলনা, পাথরঘাটা-বরিশাল সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, গ্রাম থেকে নির্বিচারে কেটে আনা বিভিন্ন আকৃতির গাছ সড়কের পাশে জড়ো করে রাখা হয়েছে। কিছুক্ষণ পরপর সেই গুঁড়ি ট্রাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
স্থানীয়রা জানান, গ্রামে ঘুরে ঘুরে কম বয়সী গাছ কেনেন পাইকারেরা। দাম কম এবং চাহিদা বেশি থাকায় সাধারণত কম বয়সী গাছ কিনতে আগ্রহী থাকেন তাঁরা। গ্রাম থেকে গাছ কেটে গুঁড়ি এনে জড়ো করেন উপজেলার বিভিন্ন সড়কের দুই শতাধিক স্থানে। পাইকারদের মাধ্যমে এই গাছের গুঁড়ি সংগ্রহ করেন কাঠ ব্যবসায়ীরা।
উপজেলার সাত ইউনিয়ন থেকে প্রতিদিন অন্তত ১০টি ট্রাকে করে এসব গুঁড়ি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। অভিযোগ রয়েছে, এসব ট্রাকে করে মালিকানাধীন গাছের আড়ালে সংরক্ষিত বনের গাছ পাচার হচ্ছে।
পাইকারি কাঠ ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘গ্রাম থেকে পাইকারের মাধ্যমে আমরা গাছ কিনে থাকি। সেসব গাছের গুঁড়ি সড়কের পাশে এনে রাখা হয়। পরে ট্রাকে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।’
গাছ কাটা এবং এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় কাঠ পরিবহনে বন বিভাগের অনুমোদন প্রয়োজন। এই আইনও মানছেন না ব্যবসায়ীরা। নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে বন্যপ্রাণী পড়েছে হুমকির মুখে। এ ছাড়া প্রায়ই বন্য শূকরের আক্রমণে হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
জানা গেছে, পাথরঘাটা উপজেলায় শতাধিক করাতকলের মধ্যে ২২টি পরিচালিত হচ্ছে বৈধভাবে। এসব করাতকলে যে পরিমাণে গাছ কাটা হচ্ছে, এর চেয়ে ট্রাকে গাছের গুঁড়ি পরিবহনে বেশি ক্ষতি হচ্ছে।
পাথরঘাটার পরিবেশকর্মী শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, গাছ কাটা যেমন একধরনের ক্ষতি, কাঠ পোড়ানোও ক্ষতি। এতে কার্বন ডাই-অক্সাইড বাড়ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ওজোনস্তর। এ ছাড়া করাতকলের মাধ্যমে যে গাছ কাটা হচ্ছে, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ক্ষতি করছেন ট্রাকে গাছ টানা ব্যবসায়ীরা। গাছ কাটা এবং কাঠ পোড়ানো বন্ধ করা না গেলে পরিবেশে বিপর্যয় নেমে আসবে।
২০২২ সালের ১ অক্টোবর দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষার লক্ষ্যে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সংরক্ষিত ও প্রাকৃতিক বনাঞ্চলে গাছ কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখার প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সে সময় তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ২০৩০ সাল পর্যন্ত কোনোভাবেই সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কাটা যাবে না। তবে সামাজিক বনের গাছ কাটতে বাধা নেই।
পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির বলেন, ‘এ বিষয়ে আগামী আইনশৃঙ্খলা সভায় তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
পাথরঘাটা বন বিভাগের কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, এক এলাকা থেকে অন্য এলাকার গাছ নিতে বন বিভাগের অনুমতি লাগে। তবে কেউ অনুমতি নেয় না। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও মালপত্র না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছি না। আগামী সপ্তাহ থেকেই এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’